বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান আলোচনা কর

বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান আলোচনা কর

বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান অবিস্মরণীয়, লর্ড ওয়েলেসলি ভারতের গভর্ণর নিযুক্ত হওয়ার পর লক্ষ্য করলেন যে, বিলেত থেকে যেসব সিভিলিয়ান কর্মচারী এদেশে আসে, তারা এদেশের ভাষা না জানাতে শাষন ও শোষনে বিঘ্নতা দেখা দেয়। ফলে এই সমস্যার সমাধানের জন্য ১৮০০ সালের ৯ জুলাই গভর্ণর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি ও তার কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলকাতার লালবাজারের নিকটে ‘ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেখানে সিভিলিয়ানরা এদেশের ভাষা,সাহিত্য, ভূগোল, ইতিহাস, আইন-কানুন ইত্যাদি  সম্বন্ধে শেখানো যায়। 
 ১৮০০ সালের ১৮ই আগস্ট এ কলেজের কার্য্ক্রম  শুরু হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, এবং তাদের মাধ্যমে আরবি, ফারসি, সংস্কৃত, উর্দূ, বাংলা, মারাঠা, তেলিঙ্গা, তামিল ও কানাড়ী ভাষা নিয়মিত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এসময় কলেজের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন পাদ্রি ডেভিড ব্রাউন এবং তার সহকারী হন সি.বুকানন।উক্ত কলেজে আরবি, ফারসি ও উর্দূ বিষয়ে শিক্ষা শুরু হয় ১৮০০ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে।
বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান আলোচনা কর  - lobhtech


১৮০১ সালের ১লা মে উইলিয়াম কেরীকে প্রধান অধ্যাপক করে এবং তার অধীনে ৬ জন সহকারী নিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগ চালু করা হয়।উইলিয়াম কেরী ছিলেন প্রধান অধ্যাপক।এ সময়ে তার অধীনে প্রধান পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার এবং ২য় পণ্ডিত রামনাথ বানস্পতি এবং রামরাম বসু, শ্রীপতি মুখোপাধ্যায়, পদ্মলোচন চূড়ামণি ও রাজিব লোচন মুখোপাধ্যায় সহ মোট ছয় জন সহকারী ছিল। ১৮১৮ সালের জুন মাসে এ কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক সংখ্যা দাড়ায় ১৫ জনে।উল্লেখ্য যে, উইলিয়াম কেরী এ কলেজের বাংলা, সংস্কৃত এবং মারাঠী ভাষার প্রধান ছিলেন।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ১৮৫৪ সাল পর্য্ন্ত চালু থাকে।তবে রাজা রামমোহন রায় যখন থেকে কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং বাংলা সাহিত্যের উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হয়, তখন থেকে এই কলেজের কার্য্ক্রম হ্রাস পেতে থাকে।
একাধিক বিশিষ্ট পণ্ডিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে শিক্ষাদান করেছেন। ভারতীয় ভাষাগুলির বিকাশে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এঁদের কয়েকজনের তালিকা নিচে দেওয়া হল।
  • উইলিয়াম কেরি (১৭৬১ – ১৮৩৪) ১৮০১ সাল থেকে ১৮৩১ সাল পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে শিক্ষাদান করেন। এই পর্বে তিনি একটি বাংলা ব্যাকরণ ও অভিধান, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, বাংলা বাইবেল এবং একাধিক ভারতীয় ভাষার ব্যাকরণ ও অভিধান প্রণয়ন করেন।[১২]
  • জন বোর্থউইক গিলক্রিস্ট (জুন ১৭৫৯ – ১৮৪১)
  • মৃত্যুঞ্জয় তর্কালঙ্কার (১৭৬২ (?) – ১৮১৯) ছিলেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রথম হেড পণ্ডিত। তিনি একাধিক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম ‘সচেতন শিল্পী’ মনে করা হয়।[১৩] সংস্কৃত পণ্ডিত হয়েও তিনি কলেজের প্রয়োজনে বাংলা লিখতে শুরু করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল বত্রিশ সিংহাসন (১৮০২), হিতোপদেশ (১৮০৮) ও রাজাবলী (১৮০৮)। মৃত্যুঞ্জয় ইংরেজি জানতেন না। সম্ভবত কলেজের ইংরেজি-জানা পণ্ডিতদের থেকে তিনি তাঁর বইয়ের উপাদান সংগ্রহ করেন।[৭]
  • তারিণীচরণ মিত্র (১৭৭২ – ১৮৩৭) ছিলেন ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি, আরবি ও ফার্সি ভাষায় পণ্ডিত। তিনি হিন্দুস্তানি ভাষা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিও বাংলায় অনেক গল্প অনুবাদ করেন।[১৪]
  • লুল্লুলাল হিন্দি খড়িবোলি গদ্যের জনক। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হিন্দুস্তানি ভাষা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ১৮১৫ সালে আদি হিন্দি সাহিত্যের প্রথম বই তুলসীদাসের বিনয়পত্রিকা মুদ্রণ ও প্রকাশ করেন তিনি।[৩]
  • রামরাম বসু (১৭৫৭ – ১৮১৩) কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ডকে প্রথম বাংলা বাইবেল প্রকাশনায় সহায়তা করেন।[৩]
  • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০ – ৯১) ১৮৪১ থেকে ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড পণ্ডিত ছিলেন। এই কলেজে অধ্যাপনাকালে তিনি ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় মনোনিবেশ করেন।[১৫]
  • মদনমোহন তর্কালঙ্কার (১৮১৭ – ৫৮) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে শিক্ষকতা করতেন। তিনি একাধিক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।[১৬]

Post a Comment

0 Comments