উঃ মনােবিদ থর্নডাইকের তার পাজল-বক্সে বিড়ালকে রেখে এক যুগান্তকারী পরীক্ষা করেছিলেন। ঐ পরীক্ষার ভিত্তিতে শিখনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। দীর্ঘ গবেষণার পর থর্নডাইক শিখন সংক্রান্ত তিনটি প্রধান সূত্র ও পাঁচটি অপ্রধান সূত্র উদ্ভাবন করেন।
■ থর্নডাইকের শিখনের মূল সূত্র :
1) অনুশীলনের সূত্র : অনুশীলনের সূত্র অনুযায়ী শিখতে গেলে অনুশীলন প্রয়ােজন। এই পদ্ধতিতে শিখনপ্রক্রিয়া ক্ৰমবিকাশমান।
2) প্রস্তুতির সূত্র : প্রচেষ্টা-ভুলের কৌশলে শিক্ষার্থীদের জৈবমানসিক প্রস্তুতি প্রয়ােজন। শিক্ষার্থীর আগ্রহ বা প্রেষণা প্রচেষ্টা ও ভুলের কৌশলের একটি অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় উপাদান।
3) ফললাভের সূত্র : প্রচেষ্টা ও ভুলের কৌশলে কোন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে বা কোন প্রক্রিয়া বর্জন করা হবে, তা প্রাপ্ত ফলের দ্বারা নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে যে ফল সুখদায়ক সেই প্রতিক্রিয়া গৃহীত হয় এবং যে প্রতিক্রিয়া বেদনাদায়ক তা পরিত্যক্ত হয়।
■ শিক্ষাক্ষেত্রে অনুশীলন সূত্রের গুরুত্ব :
1) শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক জটিল ও নতুন অংশগুলি বারবার উপস্থাপন করেন। এছাড়া আলােচনা, বিতর্কসভা, শিক্ষামূলক ভ্রমণ ইত্যাদির মাধ্যমে অনুশীলনের সুপারিশ করেন।
2) পঠিত বিষয় কিছু সময়ের ব্যবধানে শিক্ষক আবার আলােচনা করবেন।
3) শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠনপাঠনের সময় জানা থেকে অজানা বিষয়ে নিয়ে যাওয়ার নীতি গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে তাকে অতীত অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করারও চেষ্টা করতে হবে।
4) ভুল ও অপ্রয়ােজনীয় অংশগুলি যাতে প্রথম সুযােগেই বাদ দেওয়া যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়কেই সেদিকে নজর দিতে হবে।
■ শিক্ষাক্ষেত্রে ফললাভের সূত্রের গুরুত্ব :
1) শিখন যদি শিক্ষার্থীকে আনন্দ ও তৃপ্তি দেয়, তাহলে শিক্ষার্থীর মধ্যে স্বাভাবিক প্রেরণা দেখা যাবে। এজন্য বিষয়বস্তু সহজ ও বােধগম্য হওয়া চাই।
2) শিক্ষার্থী তার রােজকার জীবনের সঙ্গে শিক্ষণীয় বিষয়ের মিল খুঁজে পেলে শিখনে আগ্রহী হয়।
3) শিক্ষার্থীর সামনে বিষয়বস্তুকে সহজ থেকে কঠিন নীতিতে উপস্থাপন করতে হবে। এভাবে শিক্ষার্থী সহজে বিষয়বস্তু আয়ত্ত করতে পারবে।
4) শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষণীয় বিষয়কে প্রতিকর, সহজ ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করতে হবে।
5) পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করেন বা পুরস্কার প্রদান করেন তাহলে তাদের মধ্যে উৎসাহ বাড়ে। এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।