বাংলা সাজেশন – ২০২৩ প্রশ্নমান–৩
“ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় । ” বক্তা কে
? ‘ ঢং ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? কীসে ঢং নষ্ট হয়ে যাবে ?
Ans:
কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে আলোচ্য কথাগুলি গল্পের কেন্দ্রীয়
চরিত্র হরিদা আলোচ্য উক্তিটির বক্তা । গল্পে ‘ ঢং ‘ বলতে ‘ বহুরূপী ‘ সেজে হরিদা যে
অভিনয় করতেন সেটাই বোঝানো হয়েছে । হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত
হন বেশ কিছু উপার্জনের আশা নিয়ে । হরিদাকে প্রকৃত বিরাগী মনে করে জগদীশবাবু তাকে আতিথ্য
গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন । হরিদা আতিথ্য প্রত্যাখ্যান করলে জগদীশবাবু হরিদাকে তীর্থ
ভ্রমণের জন্য একশো এক টাকা প্রণামি দিতে চান । এই অর্থ গ্রহণ করলে হরিদার বহুরুপী পেশা
নষ্ট হয়ে যাবে , তাই তিনি প্রকৃত সন্ন্যাসীর মতো এই অর্থ প্রত্যাখ্যান করেন ।
“ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল।” — ওরা কারা ? তারা
কী কারণে ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল?
উত্তরঃ
ওরা অর্থাৎ অমৃত ও ইসাব। অনেক কষ্ট করে ইসাবের বাবা নতুন জামা দিয়েছিলেন, আর সেই জামা প্রথম দিনেই ইসাব ছিড়ে ফেলেছে,
তা দেখামাত্র ইসাবের বাবা তাকে খুব মারবেন — সেই ভয়ে অমৃত ও ইসাব কাঠ হয়ে গিয়েছিল।
“এল মানুষ ধরার দল”—মানুষ ধরার দল’ কারা? তারা আসার
পর কী হয়েছিল?
উত্তর : উৎস : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘ওরা’ বলতে তথাকথিত সভ্য সাম্রাজ্যলোভী; “মানুষধরার দলের’ কথা বলা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আফ্রিকা মহাদেশে সম্পদের লোভে ভিড় করেছিল। তারা নির্মম শোষণের দ্বারা আফ্রিকাকে করায়ত্ত করার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল। ফলস্বরূপ আফ্রিকাকে হতে হয়েছিল-মানহারা, লাঞ্ছিতা, অপমানিতা ও লুণ্ঠিতা। প্রদত্ত মন্তব্যের মধ্য দিয়ে এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিষ্ঠুরতা ও দাস প্রথার নির্মমতার ইঙ্গিত প্রস্ফুটিত হয়েছে।
আমরা ভিখারি বারোমাস’— ‘ আমরা ’ বলতে
কাদের বোঝানো হয়েছে ? তারা নিজেদের সর্বদা ভিখারি বলে মনে করেছেন কেন ?
Ans
: কবি শঙ্খ ঘোষের ‘ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ‘ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত । এখানে
‘ আমরা ‘ বলতে বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে ও মৌলবাদী শক্তির অত্যাচারে
জর্জরিত সাধারণ , শান্তিকামী ও শ্রমজীবী মানুষদের বোঝানো হয়েছে ।
এক্ষেত্রে ‘ আমরা ’ একটি বিশেষ শ্রেণিচরিত্র , দেশকালভেদে যারা সর্বদাই এক । সাধারণ , শ্রমজীবী এই মানুষগুলি সমাজের নীচের তলার মানুষ হিসেবে পরিচিত । এরা সভ্যতার ধারক ও বাহক । কিন্তু এরাই থাকে । সবচেয়ে অন্ধকারে । সমাজের তথাকথিত উচ্চবিত্তের দয়াদাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভর করে এদের মরা বাঁচা । শাসকের ক্ষমতার বদল হলেও এদের দীনতার কোনো বদল হয় না । সাধারণ এই মানুষগুলি সর্বদাই বঞ্চিত থাকে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে । আবার সাম্রাজ্যবাদী ও মৌলবাদী শক্তি যখন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিশ্বময় উন্মাদনা সৃষ্টি করে , তখন সবার আগে এরাই আশ্রয়চ্যুত হয়ে পড়ে , টান পড়ে এদের রুটি – রুজিতে । এদের জীবনের ইতিহাস কোথাও লেখা হয় না । আর যদিও – বা হয় তবে তা ক্ষমতাবান ও সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে বিকৃত হয়ে পরিবেশিত হয় । অথচ এই সমস্ত মানুষরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিচারে ভিখারি নয় , এরা সামাজিক দিক দিয়েও দীন , শাসকের অবজ্ঞা , উপেক্ষা ও অবহেলার পাত্র । তাই কবি এই সাধারণ মানুষদের জবানিতে বলেছেন , ‘ আমরা ভিখারি বারোমাস ।
পত্রিকাটি সকলের হাতে হাতে
ঘোরে,” — কোন পত্রিকা, কেন সকলের হাতে হাতে ঘুরছিল ?
উত্তর:-
“তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার
নীচে কম জ্বলে না”- কে কাকে বলেছিল? সেই লাঞ্ছনার কথা উল্লেখ কর। ১+২
উত্তরঃ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব রামদাসকে একথা বলেছিল। কয়েকজন ফিরিঙ্গি যুবক
অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্বর কোনো দোষ ছিল না। তাই
সে স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়েছিল প্রতিবাদ জানাতে। কিন্তু ভারতীয় হওয়ার অপরাধে সাহেব
স্টেশন মাস্টার অপূর্বকে তার নিজের দেশের স্টেশন থেকে কুকুরের মতো দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে এই লাঞ্ছনার কথা বলা হয়েছে।
“তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল
না।” – কারা কী কারণে স্বপ্ন দেখতে পারল না? ১+২
উত্তর-
পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় দেবতাদের সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে। কবি বলেছেন
তারা (অর্থাৎ, দেবতারা) আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। শান্ত, হলুদ দেবতারা হাজার হাজার
বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিল। মানুষে মানুষে বিবাদ বাঁধলেও দেবতারা সবসময় নির্বিরোধ প্রকৃতির
হয়। তাই সারাক্ষণ তারা স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত। তারপর হঠাৎ একদিন শহরজুড়ে যুদ্ধের
দামামা বেজে উঠল। সেই সর্বগ্রাসী যুদ্ধের আগুনে বহু মানুষের মৃত্যু হল, ঘরবাড়ি ভেঙে
পড়ল এবং দেবতারাও ভূপতিত হল। এইজন্য তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে
শিলা জলে – তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর
– মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’-এর অভিষেক নামক
প্রথম সর্গের অন্তর্গত অভিষেক শীর্ষক পাঠ্যাংশে রাবণ তার পুত্র ইন্দ্রজিতকে একথা বলেছেন।
যুদ্ধে মেঘনাদ রামচন্দ্রকে হত্যা করে ফিরে আসে কিন্তু দৈব মায়ায় রাম হয়ে বেঁচে উঠে
বীরবাহুকে হত্যা করে। লঙ্কার এই দুর্দিনে রাবণ তার। গপত্র মেঘনাদকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও
যুদ্ধে পাঠাতে প্রস্তুত হন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছেন কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা
জলে অর্থাৎ মৃত মানুষ কখনো বেঁচে ওঠে না। রামচন্দ্রের পুনরায় বেঁচে ওঠার ঘটনা যেন
জলে প্রস্তরখন্ড ভাসার মতোই অবাস্তব ঘটনা।
‘নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই
উপভোগ করে” – কার কথা বলা হয়েছে? তার ‘পাগলামিটি কি?
উত্তর- ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদের কথা আলোচ্যাংশে বলা হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বড় হয়ে ওঠা নদেরচাঁদের কাছে, নদী একটি ভালোবাসার বিষয়। ‘নদীর ধারে তাঁর জন্ম হয়েছে, নদীর ধারে সে মানুষ হয়েছে, চিরদিন নদীকে সে ভালোবেসেছে’; নদীকে না দেখে সে থাকতে পারে না। নদেরচাঁদের এখন ত্রিশ বছর বয়স, সে একটি রেল ষ্টেশনের ষ্টেশন মাস্টার। কিন্তু এখনও সে তাঁর ষ্টেশনের কাছের নদীর সাক্ষাৎ পাবার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে। নদীর প্রতি এই অস্বাভাবিক টানকে নদেরচাঁদের পাগলামি বলে মনে হয়, কিন্তু মনের অভ্যন্তরে নদেরচাঁদ এই ছেলেমানুষি থেকে আনন্দ অনুভব করে।
“যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হবার কথা,
সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।”- ‘আহ্লাদ’ হবার কথা ছিল কেন? ‘আহ্লাদ খুঁজে না পাওয়ার’ কারণ কী? ১+২
[মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তরঃ
আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে নিজের লেখা গল্প ছাপা হলে তপনের আহ্লাদ হবার কথা ছিল।
তপনের লেখা গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপানো হলে একসংখ্যা পত্রিকা সঙ্গে নিয়ে নতুন
মেসো তপনদের বাড়িতে আসেন। কিন্তু বাড়ির সকলে তপনের প্রশংসা না করে তার নতুন মেসোর প্রশংসা
করেছিল। কারণ, তিনি নাকি গল্পটা অল্পবিস্তর ‘কারেকশন’ করেছিলেন এবং তার
পরিচিতির জন্যই গল্পটা ছাপা হয়েছিল। এইসব কথার জন্য তপন কোনো আহ্লাদ খুঁজে পায়নি।
"অতি মনোহর দেশ"
— এই মনোহর দেশে'র সৌন্দর্যের পরিচয় দাও । [মাধ্যমিক-২০১৯]
উঃ-
সৈয়দ আলাওল রচিত 'সিন্ধুতীরে' কবিতায় সমুদ্রকন্যা পদ্মার একটি প্রাসাদ কল্পনা করা
হয়েছে । এই প্রাসাদটিকে সমুদ্রের মাঝে দ্বীপভূমির মতো দেখায় । একেই অতি মনোহর দেশ বলা
হয়েছে । কবির বর্ণনানুসারে এই দিব্যপুরী অতি মনোহর । সেখানে কোনো দুঃখকষ্ট নেই । আছে
শুধু সত্যধর্ম এবং সদাচার । আর আছে একটি পর্বত এবং নানা ফুলে ভরা অপূর্ব এক উদ্যান
। সেখানে গাছগুলিতে নানা ফল ও ফুলের সমারোহ ।
কবিতায় ‘ অস্ত্র রাখো , অস্ত্র
ফ্যালো পায়ে ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? একথা বলার কারন কি ?
Ans: অস্ত্রের অবস্থান কখনও উচ্চ আসনে হতে পারে না । তার অবস্থান সবসময় পায়ে অর্থাৎ নীচে হওয়াই বাঞ্ছনীয় বলে উক্ত পঙ্ক্তিতে বলা হয়েছে । আলোচ্য পংক্তিটি কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার অন্তর্গত। এই কবিতাটি একটি যুদ্ধ বিরোধী কবিতা। এই কবিতার মধ্যে দিয়ে কবি সকল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজ শক্তিকে অস্ত্র ত্যাগ করতে বলেছেন। কবি অস্ত্রের বিপরীতে গানকে তুলে ধরেছেন, এই গান আসলে মানবতার গান। কবি আশা করেছেন যে সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মনে একদিন শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা মানবতার খাতিরে অস্ত্র ত্যাগ করবে। তাই কবি এখানে গানের কাছে অস্ত্র ত্যাগ করার কথা বলেছেন।
বলতে গেলে ছেলে দুটোর সবই একরকম,
তফাত শুধু এই যে....।” ছেলে দুটো কে কে? তাদের মিল ও অমিল উল্লেখ করো।
উত্তর:
উল্লিখিত অংশে ছেলে দুটো বলতে অমৃত আর ইসাবের কথা বলা হয়েছে। ‘অদল বদল’ গল্পটিতে আমরা
অমৃত ও ইসাব নামের দুজন বন্ধুকে দেখতে পাই, যারা একই ক্লাসে এবং একই স্কুলে পড়ত। তাদের
বাড়ি ছিল মুখোমুখি, দুজনেরই বাবা পেশায় ছিল চাষি। জমির পরিমাণও তাদের প্রায় এক দুজনের
বাবাকেই বিপদে আপদে ধার নিতে হত। অমৃত ও ইসাব একইরকম জামাও পরত । এইগুলোই ছিল তাদের মধ্যে মিল । কেবল একটি
জায়গাতেই তাদের অমিল ছিল—অমৃত তার মা, বাবা আর তিন ভাইয়ের সঙ্গে থাকত, কিন্তু ইসাবের
শুধু বাবাই ছিল |
সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস - কোন্
জিনিসের কথা বলা হয়ছে? তা দুর্লভ কেন?
Ans...
সুবোধ ঘোষের 'বহুরূপী' গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলোকে 'দুর্লভ
জিনিস' বলা হয়েছে। 'খুবই উঁচু দরের' সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরেরও বেশি। হিমালয়ের
গুহায় একটি হরীতকী খেয়ে তিনি জীবনধারণ করে চলেছেন। ফলত তাঁর পায়ের ধুলো পাওয়া আদৌ
সহজলভ্য বস্তু ছিল না। জগদীশবাবু অবশ্য সোনার বোল লাগানো নতুন খড়ম পরানোর ফাঁকে দুর্লভ
জিনিসটি সংগ্রহ করেছিলেন।
"এসো যুগান্তের কবি”- যুগান্তের কবি
কে কেন আহ্বান করা হয়েছে?
Ans:
দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকা 'মানহারা মানবী' আফ্রিকা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসী মনোভাবে
অপমানিতা। মানবতার এই অপমান শুধু আফ্রিকার নয়, এই অপমান সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের।
সভা পুনিয়ার বর্বরোচিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতি আক্রমণ নয়, মানবতার পূজারী রবীন্দ্রনাথ
'যুগান্তের কবি'র কাছে আহ্বান জানিয়েছেন আবির্ভূত হয়ে ক্ষমা প্রদান করতে। তিনি মানবতার
পুণ্যা বাণী দ্বারা সকলকে উদ্বুদ্ধ করবেন এই বিশ্বাস থেকেই কবি তাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
"সে জানতো না আমি আর কখনো
ফিরে আসব না।"-- সে কে ? 'আমি আর কখনো ফিরে আসব না' বলার কারণ কী ?
উত্তর: পাবলো নেরুদা রচিত নবারুণ ভট্টাচার্য অনূদিত 'অসুখী
একজন' কবিতায় 'সে' বলতে অপেক্ষমানা মেয়েটির
কথা বলা হয়েছে। কর্তব্যের খাতিরে স্বদেশ-স্বজন ছেড়ে কবি কথক হয়েছেন সুদূরের যাত্রী। বছরের পর বছর কেটে গেলেও
তিনি ফিরে আসতে পারেননি। ঘটনাটি হৃদয়বিদারক হলেও তিনি প্রতীক্ষারতা মেয়েটিকে জানিয়ে
যেতে পারেননি তাঁর না ফেরার কথা। বোধ করি সে কারণেই মেয়েটি দরজায় দাঁড়িয়ে কথকের
ফেরার প্রতীক্ষা করেছিল বছরের পর বছর।
"উনি দশ বছরের অমৃতকে
জড়িয়ে ধরলেন ।" — 'উনি' কে ? কেন অমৃতকে উনি জড়িয়ে ধরলেন ? [মাধ্যমিক-২০১৮]
উঃ-
ইসাবের বাবা দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরেছিলেন । ♦ ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায়, ইসাবকে তার বাবার মারের হাত
থেকে বাঁচানোর জন্য অমৃত নিজের জামার সঙ্গে তার জামা বদলে নিয়েছিল । কারণ অমৃতকে তার
বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তার মা আছে; কিন্তু ইসাবের মা নেই, তার রয়েছে শুধু
বাবা । তাই জামা ছিঁড়ে আনলে অমৃত মারের হাত থেকে বাঁচলেও ইসাব বাঁচত না । অমৃতের মনের
এই উদারতা দেখে আনন্দে ইসাবের বাবা অমৃতকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ।
“বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে
দিয়েছিলেন।”- বক্তা কে ? তাঁর বাবা কাকে কী চাকরি করে দিয়েছিলেন ? ১+২
[মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তরঃ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব একথা বলেছিল। অপূর্বর বাবা নিমাইবাবুকে পুলিশের
চাকরি করে দিয়েছিলেনে। সেই নিমাইবাবুই বর্মায় গিয়েছিলেন পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী
মল্লিককে ধরার জন্য।
“সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে
গেল আগুনে।” কোন্ কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে? এই পরিণতির কারণ কী?
১+২ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর-
পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যেসব জিনিস আগুনে নষ্ট হয়েছিল সেগুলি হল- কথকের
মিষ্টি বাড়ি, বারান্দায় থাকা ঝুলন্ত বিছানা, চিমনি, জলতরঙ্গ এবং সেই গোলাপি গাছ যার
পাতাগুলি ছিল ছড়ানো করতলের মত। এই পরিণতির কারণ ছিল একটি যুদ্ধ। কবির মতে, সেই যুদ্ধ
ছিল ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যেমন বহু জনপদ ধ্বংস হয়ে
যায় তেমনই সেই ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে শহরের করুণ পরিণতি হয়েছিল।
আমাদের ইতিহাস নেই” — কে, কেন এ কথা বলেছেন ?
উত্তরঃ কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর রচিত “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতায় প্রশ্নের উদ্ধৃত অংশটির কথা বলেছেন । ইতিহাস হল কোনো জাতির এবং সভ্যতার আত্মবিকাশের পথ ও পর্যায়ের কাহিনি । কিন্তু যখন সেই ইতিহাস নিয়ন্ত্রিত হয় কোনো ক্ষমতাবান গোষ্ঠী, ধর্মসম্প্রদায় কিংবা রাজনীতির দ্বারা, তখন ইতিহাসের বিকৃতি ঘটে । ক্ষমতাবানরা নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলে । মানুষ একসময় ভুলে যায় তার প্রকৃত ইতিহাস, আর চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাসকেই নিজের বলে মেনে নেয় । এই পরিপ্রেক্ষিতেই এখানে কবি বলেছেন আমাদের ইতিহাস নেই ।
প্রশ্নমান–৫
তপন আর পড়তে পারে না। বোবার মতো বসে থাকে- তপনের এরকম অবস্থার
কারণ কী?
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম
প্রধান লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর লেখা কুমকুম গল্পগ্ৰন্থের অনন্তরগত জ্ঞানচক্ষু গল্পে
স্কুলপড়ুয়া তপন লেখক হতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার ধারণা ছিল লেখকরা সাধারণ মানুষ নন
আকাশ থেকে পড়া অতিলৌকিক কোনো প্রতিভা। কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে তপনের এই ধারণা দূর
হয়। এবার তপন নিজে একটা গল্প লিখে ফেলে। মেসো প্রতিশ্রুতি দেন সন্ধ্যাতারা পত্রিকায়
তিনি সেটা ছাপিয়ে দেবেন। গল্প ছাপানো হলে ছাপানো গল্পটা পড়ে তপন হতবাক হয়ে যায়।
কারণ গল্পের প্রতিটি লাইন নতুন ও আনকোরা। তার মধ্যে তপন নিজেকে একেবারেই খুঁজে পায়না।
তার মনে হয় গল্পটা তার নয়। নিজের লেখা গল্পের আমূল পরিবর্তন দেখে তপন দুঃখ ও অপমানিত
বোধ করে। নিজের প্রকাশিত গল্প পড়তে গিয়ে তপন যখন দেখে মেসোমশাই তার পুরো গল্পটাই
কালেকশন করে দিয়েছেন, তখন সে আর পড়তে পারে না বোবার মতো বসে থাকে।
‘ অমৃত সত্যি তার বাবা – মাকে
খুব জ্বালিয়েছিল । —অমৃত কাভাবে বাবা – মাকে জ্বালাতন করেছিল ? অবশেষে অমৃতের মা কী
করেছিলেন ? Ans: অমৃতের বাবা – মাকে জ্বালাতন উত্তর অমৃত আর ইসাব – দুজন খুব ভালো বন্ধুর
গল্প পান্নালাল প্যাটেলের ‘ অদল বদল ‘ গল্পটি । পরস্পরের বন্ধুত্ব যেমন গাঢ় তেমনই
পোশাক – পরিচ্ছদ হেতু পরস্পরের রেষারেষি বেশ প্রবল । দুজনের বাবাই খেত মজুর । খেতে
কাজ করতে গিয়ে ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ার তার বাবা তাকে নতুন জামা কিনে দিলে তার
দেখাদেখি অমৃতেরও নতুন জামা কেনার জন্য বাবা – মার কাছে জেদ করে । ফতোয়া জারি করে
নতুন জামা কিনে না দিলে সে স্কুলে যাবে না । তার যে নতুন জামা নেই তা বোঝাতে নিজের
জামার আবিষ্কার করে কোনো ছোটো একটা ছেঁড়া জায়গা , যাতে আঙুল ঢুকিয়ে সেই জায়গাকে
আরও ছিড়ে দেয় । মা অনেকভাবে অমৃতকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন , সে খাওয়াদাওয়া
ছেড়ে দেয় , রাতে বাড়ি ফিরতেও চায় না ; ইসাবদের গোয়ালে লুকিয়ে থাকে । এভাবেই অমৃত
তার বাবা – মাকে জ্বালাতন করত ।
“আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে
মরে যাব না কি?” – এমনটা মনে হচ্ছে কেন? ৫ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর-
কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় এক সংকটময়
পরিস্থিতির ছবি তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধের সর্বগ্রাসী লেলিহান শিখা যখন মানুষকে মৃত্যুর
মুখে ঠেলে দেয় তখন সাধারণ মানুষের পালাবার কোনো পথ থাকে না। দিশেহারা মানুষের ডানদিকে
ধস, বাঁয়ে গিরিখাত, মাথার উপর বোমারু বিমান। অর্থাৎ, যেকোনো দিক থেকেই আকস্মিক বিপদ
নেমে আসতে পারে। কিন্তু সেই মৃত্যুকূপ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই কারণ পায়ের তলায়
হিমানীর বাঁধ চলার পথে বাধা সৃষ্টি করে। যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা নিষ্পাপ শিশুদেরকেও রেহাই
দেয়না। মানুষ দেখে যে তাদের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের শব। শিশুদের বলা হয়
দেশের ভবিষ্যৎ, মানবতার ভবিষ্যৎ। শিশুদের মৃত্যু হওয়া মানে মানবতার মৃত্যু অনিবার্য।
চোখের সামনে নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেষ হয়ে যেতে দেখে সাধারণ মানুষের মনে সংশয়
জাগে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত পৃথিবীতে তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার আশাটুকু হারিয়ে ফেলে। তাই
তারা নিজেদেরকেই প্রশ্ন করে- “আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি”?
"নমি পুত্র পিতার চরণে,
করজোড়ে কহিলা; " — পিতা ও পুত্রের পরিচয়
দাও । পাঠ্যাংশ অবলম্বনে পিতা ও পুত্রের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখ ।
উঃ-
পিতা ও পুত্র বলতে লঙ্কাধিপতি রাবণ ও তার প্রিয় পুত্র মেঘনাদের কথা বলা হয়েছে । ♦ পুত্রের কথায় পুত্রবৎসল এক
পিতার হৃদয়ের প্রকৃত স্বরূপটি প্রকাশিত হয় । যেখানে ধ্বনিত হয় স্নেহ হাহাকার ও অসহায়তা
। রক্ষোকুলের শ্রেষ্ঠ সম্পদকে বিপদের মুখোমুখি হতে দিতে তিনি চান না । ♦ "এ কাল সমরে, / নাহি
চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা / বারংবার ।" কারণ তিনি জানেন স্বয়ং বিধাতাও তার প্রতি
বিমুখ । নইলে শিলা যেমন জলে ভাসে না, তেমনই মৃত কখনই পুনরুজ্জীবিত হয় না । অথচ ভাগ্যবিড়ম্বিত
দশাননের জীবনে তাই ঘটেছে । পৌরুষে উদ্দীপিত ইন্দ্রজিৎ অগ্নিদেবকে রুষ্ট করতে কিম্বা
ইন্দ্রদেবের উপহাসের পাত্র হতে চান না । - তাই তিনি বলেন— " আর একবার
পিতঃ দেহ আজ্ঞা মোরে ; দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে !" বিক্ষত হৃদয়ে রাবণের
দৃষ্টির সামনে ভূপতিত পর্বতসম কুম্ভকর্ণ । তিনি প্রাণাধিক প্রিয় 'বীরমণিকে' প্রথমে
ইষ্টদেবের পূজা ও তারপর নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করে পরদিন সকালে যুদ্ধযাত্রা করতে বলেন
। যথাবিহিত উপাচারে 'গঙ্গোদক' সহকারে রাবণ মেঘনাদকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করেন ।
'বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান' শীর্ষক
প্রবন্ধটিতে পরিভাষা রচনা প্রসঙ্গে লেখক যে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তা আলোচনা করো ।
উঃ- রাজশেখর বসু 'বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান' নামক প্রবন্ধে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যেসব বাধার কথা বলেছেন তার অন্যতম হল পারিভাষিক শব্দের অভাব । একবার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী লেখক নানা বিষয়ে পরিভাষা রচনা করেছিলেন । কিন্তু যেহেতু তাঁরা কাজটি একত্রে করেননি, ফলে নতুন রচিত পরিভাষাগুলির মধ্যে সমতা ছিল না । একই বিষয়ের অনেকগুলি করে পরিভাষা তৈরি হয়েছিল । বরং ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি অনেক একত্রিতভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মানুষদের নিয়ে পরিভাষা সংকলন তৈরি করতে পেরেছিল । তবে সংকলনটি আরও পূর্ণাঙ্গ হওয়া প্রয়োজন বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন । পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা সম্ভব নয়, আবার পরিভাষা তৈরির সময় বিজ্ঞান আলোচনার যে নিজস্ব রচনাপদ্ধতি রয়েছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে । কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির থেকে সাহায্য নিয়ে সকলে মিলে নতুন পরিভাষা গড়ে তোলা ।
আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির
পথে। -কোন জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে? এই অবলুপ্তির কারণ কি? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কি?
উত্তর
– প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তার ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কালির
কলম অবলুপ্তির কথা বলেছেন। এই অবলুপ্তির কারণ হল কম্পিউটার; লেখকের কথায় ‘কম্পিউটার
তাদের জাদুঘরে পাঠাবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে’। লেখক একজন কলমপ্রেমী
মানুষ, লেখক কালির কলমে লিখতে ভালোবাসেন। কিন্তু সময়ের সাথে তাল মেলাতে কালির কলম অক্ষম।
দীর্ঘ সময়ের বিবর্তনের পথ পেরিয়ে কলম আজ বল – পেনের রূপ নিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে কলমের
স্থান দখল করছে কম্পিউটার। লেখক এই ভেবে বিস্মিত হন যে ‘মানুষের হাত থেকে যদি কেড়ে
নেওয়া হয় কলম, যদি হাতের লেখা মুছে যায় চিরকালের জন্য তবে আর কি রইল?’ কলমের দিন ফুরানোর
ব্যাপারে লেখক সন্দিহান হলেও, লেখক মনে করেন ইতিহাসে কলমের ঠাই পাকা।
“বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা
শুধু মুসলমানের নয়।” – মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।”- কাদের উদ্দেশ্য
করে একথা বলা হয়েছে? এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বস্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত
হয়েছে? [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের
লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজ তার বিদ্রোহী সভাসদদের উদ্দেশ্য করে একথা বলেছিলেন। এই বিদ্রোহী
সভাসদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা রাজবল্লভ, ভাগ্যবান জগৎশেঠ, শক্তিমান রায়দুর্লভ
প্রমূখ। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার অসাম্প্রদায়িক
মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। একইসঙ্গে, সিরাজের এই উক্তি নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের ভাবনায়
উজ্জ্বল। বস্তুতপক্ষে, সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করার পর বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার
সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই সিরাজকে বাংলার নবাব হিসাবে মেনে নিতে পারেনি। এই বিষয়ে নবাবের
অন্দরমহলে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ ছিল তেমনি রাজকর্মচারীদের মনেও অসন্তোষ
দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। স্বাধীনচেতা নবাবকে নিয়ে ঘরে-বাইরে নানা অপবাদ রটানো হয়েছিল।
কিন্তু উদ্ধৃত উক্তির মাধ্যমে সিরাজ বলতে চেয়েছেন যে তিনি কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন
নন। তিনি নিজে একজন মুসলমান হলেও বাংলার মাটিতে হিন্দু-মুসলমানের সমান অধিকারের কথা
বলেছেন। আবার, নিজের মাতৃভূমিকে মনোরম ‘গুলবাগ’-এর সঙ্গে তুলনা
করেছেন।
“মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম
সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।”- কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল? [মাধ্যমিক
২০১৮]
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের
‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে জনৈক অ্যাডমিরাল ওয়াটসন সিরাজের দরবারে নিযুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধি
ওয়াটসকে এই পত্র লিখেছিলেন। আলোচ্য পত্রে বাংলার বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রের কথা
উল্লেখ ছিল। তবে সমগ্র পত্র পাঠ করা হয়নি। নবাবের আদেশ অনুযায়ী ওয়াটস পত্রের শেষের
দিকটা পড়েছিল এবং মুন্সিজি সেই অংশটুকু বাংলায় তর্জমা করে সভাসদদের শুনিয়েছিল। এতে
লেখা ছিল যে, কর্নেল ক্লাইভ উল্লেখিত সৈন্যবাহিনী শীঘ্রই কলকাতায় পৌঁছনোর কথা। অ্যাডমিরাল
ওয়াটসন আরো লেখেন যে, তিনি তাড়াতাড়ি আরেকটি জাহাজ মাদ্রাজে পাঠিয়ে সংবাদ দিতেন বাংলায়
আরো সৈন্য এবং জাহাজ পাঠানোর জন্য। উক্ত পত্রে ভীতি প্রদর্শনের সুরে বলা হয়েছিল যে
বাংলায় তিনি এমন আগুন জ্বালাতেন যা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানো যেত না।
'কোনি' উপন্যাস অবলম্বনে সাঁতার
প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্র সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উঃ- ঔপন্যাসিক মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসের কাহিনী যে মানুষটিকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে তিনি হলেন ক্ষিতীশ সিংহ । ক্ষিতীশ সিংহ নিঃসন্তান, পঞ্চান্ন বছরের একজন সাঁতারের প্রশিক্ষক । তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন । গঙ্গার ঘটে যেতেন প্রায় প্রতিদিন । এখন থেকেই তিনি কোনিকে আবিষ্কার করেন । অভিজ্ঞতার নিরিখে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে কোনির মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে । দীর্ঘ 35 বছর ক্ষিতীশ সিংহ জুপিটার ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । ক্লাবের মধ্যে দলাদলি ও কয়েকজনের চক্রান্তে ক্ষিতীশ সিংহকে ক্লাবের সদস্যপদ ছাড়তে হয় । কিন্তু তাঁর লড়াই থেমে যায় নি । তিনি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কোনিকে অ্যাপেলো ক্লাবে ভর্তি করিয়ে সাঁতার শেখাতে আরম্ভ করেন । ক্ষিতীশ সিংহের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভালো ছিল না, তবুও তিনি কোনির খাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং কোনির সংসার চালানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টাও করেন । এর থেকে তাঁর দরদী ও পরোপকারী মনের পরিচয় পাওয়া যায় । ক্ষিতীশ সিংহের চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় সমগ্র উপন্যাস জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় । গুরুকে শ্রদ্ধেয় হতে হবে শিষ্যের কাছে এবং কথায় কাজে ও নানারকম উদাহরণ দিয়ে শিষ্যের মনের মধ্যে একটা আকাঙ্খা, বাসনা জাগিয়ে তুলতে হবে— এটাই ছিল তাঁর মূলমন্ত্র । এইরকম মনের অধিকারী ছিলেন বলেই তিনি সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে কোনির মতো একজন সাধারণ মেয়েকে জাতীয় চ্যাম্পিয়ান তৈরি করতে পেরেছিলেন ।
“ওইটেই তাে আমি রে, যন্ত্রণাটাই
তাে আমি”- বক্তা কে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে। ১+8 [মাধ্যমিক
২০১৮]
উত্তরঃ
মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে কোনির প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ একথা বলেছেন। মাদ্রাজে আয়োজিত ন্যাশনাল
চ্যাম্পিয়নশিপে শেষ মুহূর্তে জলে নামার সুযোগ পেয়েছিল কোনি। সাঁতারু হিসেবে অংশগ্রহণ
করেও তাকে নানা অজুহাতে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। মেয়েদের রিলে রেসের আগে অমিয়া অসুস্থ হয়ে
পড়লে তাকে বিনা প্রস্তুতিতে জলে নামতে হয়েছিল। এতোদিন দর্শকাসনে বসে থাকার পর যখন সে
নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেল তখন নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে রমা জোশীকে হারিয়ে বাংলার
জয় নিশ্চিত করেছিল কোনি। জল থেকে উঠে ক্ষিদ্দাকে নিজের শারীরিক কষ্টের কথা জানালে ক্ষিদ্দা
বলেছিলেন, “ওইটেই তাে আমি রে, যন্ত্রণাটাই তাে আমি”। আসলে, প্রশিক্ষক
হিসেবে ক্ষিতীশ সিংহের মূল মন্ত্র ছিল অনুশীলন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শরীরকে ঘষে ঘষে
শানিয়ে তুললে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তিনি কোনির প্রশিক্ষণে এতোটুকু খামতি রাখেন নি।
কখনো ভয় দেখিয়ে কখনো বা খাবার লোভ দেখিয়ে তিনি কোনিকে দিয়ে সাধ্যাতীত পরিশ্রম করিয়েছিলেন।
তারই ফল কোনি পেয়েছিল মাদ্রাজে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে। এইজন্য ক্ষিতীশ বলেছিলেন,
“যন্ত্রণাটাই তাে আমি”।
“অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার
দলে জায়গা পেল।”- কোনি কীভাবে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল তা সংক্ষেপে লেখাে।
৫ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তরঃ
মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে কোনির সাঁতার কাটার শুরু গঙ্গার জলে। সেখানেই ক্ষিতীশের চোখে পড়েছিল
সে। ক্ষিতীশ কোনিকে যথাযোগ্য প্রশিক্ষণ দিয়ে একজন ভালো মানের সাঁতারু তৈরি করেছিল এবং
শেষপর্যন্ত সে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেয়েছিল। কিন্তু কোনির চলার পথ মোটেও মসৃণ ছিল
না, তাকে বহু বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল। কোনির সাঁতারু হওয়ার পথে মূলত দু’রকমের প্রতিবন্ধকতা
ছিল। প্রথমটা তার ব্যক্তিগত এবং দ্বিতীয় কারণটা ছিল ক্ষিতীশ-কেন্দ্রিক। কোনি একজন বস্তির
মেয়ে, তাই স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য সুইমার এবং ক্লাব-কর্মকর্তাদের অবজ্ঞার পাত্রী ছিল।তবে,
কোনিকে বাংলার দলে না নেওয়ার মূল কারণ ছিল জুপিটার ক্লাবের ক্ষিতীশ-বিরোধী মনোভাব।
হিয়ার প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু বিশ্বাসই প্রথম কোনিকে দলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি নির্বাচনী
সভায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “কনকচাঁপা পালকে বাংলা দলে রাখতে হবে”। কোনি যে ক্লাবকর্তাদের
দলাদলির শিকার, একথা তিনি জানতেন। কোনি হিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্বেও প্রণবেন্দু
বাংলা দলে কোনিকে নিতে চেয়েছিলেন কারণ, তিনি জানতেন মহারাষ্ট্রের রমা যোশীর যোগ্য
জবাব হবে কনকচাঁপা পাল। আসলে, কোনির যোগ্যতা সম্পর্কে প্রণবেন্দুর মনে বিন্দুমাত্র
সংশয় ছিল না। বরং তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, কোনি বাংলা দলে স্থান পেলে চ্যাম্পিয়নশিপ
জেতার একটা সম্ভাবনা থাকবে। যাইহোক, ধীরেন ঘোষ, বদু চাটুজ্যেরা প্রণবেন্দুর প্রস্তাব
মানতে অস্বীকার করলে তিনি বলেন যে, কোনিকে না নেওয়া হলে বালিগঞ্জ ক্লাবও ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে
কোনো সুইমার পাঠাবে না। এরফলে ক্ষিতীশ-বিরোধী গোষ্ঠী কার্যত মাথা নত করতে বাধ্য হয়।
এইভাবে নির্বাচনী সভায় তুমুল বাক-বিতণ্ডার পর শেষপর্যন্ত কোনিকে বাংলার দলে নেওয়া
হয়েছিল।
'নদীর বিদ্রোহ' গল্প অবলম্বনে
নদীর প্রতি নদেরচাঁদের অকৃত্রিম ভালবাসার পরিচয় দাও ।
উঃ- প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের মধুর সম্পর্কের রূপটি প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে । গল্পের সূচনাতেই আমরা দেখতে পাই, দীর্ঘ পাঁচদিন প্রচন্ড বর্ষার জন্য নদীকে দেখতে না পেয়ে নদেরচাঁদ অস্থির হয়ে উঠেছে । তাই বৃষ্টি থামলেই সে সহকারীকে দায়িত্ব দিয়ে ছোটে অতল জলের আহ্বানে । নদীই তার আপনজন । নদী তার কাছে শুধু প্রকৃতির দান নয়, আত্মার আত্মীয় । কর্মব্যস্ত জীবনে নদী তার খেলার সঙ্গী । তাই পাঁচদিন ধরে স্ত্রীকে লেখা চিঠি খুব সহজেই সে নদীর ঘোলাজলে ছিঁড়ে ফেলে দেয় আর এক অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে তার মন । শৈশবেও সে নদীর প্রতি ভালোবাসায় আবিষ্ট ছিল । নদী শুকিয়ে গেলে কান্নায় তার চোখ ভিজে যেত । আসলে নদীকে সে জীবন্ত সত্তা মনে করেছে, যার কাছে হারিয়ে গেছে তার একান্ত ব্যক্তিগত জীবন । এইসব ভাবনার মধ্য দিয়ে ধরা পড়েছে নদীর প্রতি তার আন্তরিক ভালোবাসা । নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে নদেরচাঁদের হৃদয়ও যন্ত্রনায় ফেটে পড়তে চায় । কন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, তাকেও মরতে হয় যন্ত্রসভ্যতার আর এক প্রতিভূর মাধ্যমে । চলন্ত রেলগাড়ি যন্ত্রদানবের মতোই মুহুর্তে নদেরচাঁদকে পিষে দিয়ে চলে যায়—যেন নদীর প্রতি নদেরচাঁদের এই সমব্যথারই উত্তর হিসেবে ।
"অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই
ভুল ক্ষমা করবে না ।" — হরিদা কী ভুল করেছিলেন ? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম
কী ?
উঃ-
'বহুরূপী' গল্পে হরিদা অর্থ উপার্জনের জন্য বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন
। হরিদার বেশভূষা, কথাবার্তায় জগদীশবাবু মুগ্ধ হয়ে 'বিরাগী'কে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ
জানান এবং বিদায়ের সময়ে একশো টাকা প্রনামী দিতে চান । কিন্তু হরিদা উদাসীনভাবে সে
টাকা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান । যাওয়ার সময় বলে যান— "আমি যেমন
অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনিই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি
।" সন্ন্যাসী চরিত্রের সঙ্গে তিনি এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে চরিত্রের
'ঢং নষ্ট হবে' বলে হরিদা টাকা নেননি । বিস্মিত গল্পকথক এটাকেই হরিদার 'ভুল' বলেছেন
। ♦ অভাবী হরিদার ভাগ্য
হরিদাকে সঙ্গ দিতে চেয়েছিল । কিন্তু ব্যক্তিগত সততা ও আদর্শবোধের কারণে হরিদা ভাগ্যের
সহায়তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন । যা নিশ্চিত করে দিয়েছে যে অভাব কখনও হরিদাকে ছেড়ে
যাবে না । তার ভাতের হাঁড়িতে মাঝে মধ্যে শুধু জলই ফুটবে, তাতে চালের জোগান থাকবে না
। কথকের মনে হয়েছে অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুলকে ক্ষমা করবে না ।
"চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার
অপমানিত ইতিহাসে ।" — 'তোমার' বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? তার 'অপমানিত ইতিহাসে'র
সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
উঃ-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আফ্রিকা' কবিতার অন্তর্গত উদ্ধৃত অংশটিতে 'তোমার' বলতে আফ্রিকার
কথা বলা হয়েছে । ♦ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তাঁর 'আফ্রিকা' কবিতায় আফ্রিকার ওপর সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের অত্যাচার ও শোষণ-বঞ্নার
কাহিনিকে বর্ণনা করেছেন । প্রাকৃতিকভাবে দুর্গম আফ্রিকা দীর্ঘসময় ইউরোপীয় শক্তিগুলির
নজরের বাইরে ছিল । কিন্তু উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে
। এই শতকের শেষে প্রায় পুরো আফ্রিকা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপনিবেশে পরিণত হয় । এইসব
তথাকথিত সভ্য রাষ্ট্রশক্তি আফ্রিকার মানুষদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাত । তাদের নির্লজ্জ
লোভ যেন বর্বরতার রূপ ধরে আত্মপ্রকাশ করেছিল । ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল আফ্রিকার মানুষ ।
তাদের রক্ত আর চোখের জলে কর্দমাক্ত হয়েছিল আফ্রিকার মাটি । সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রনায়কদের
কাঁটা-মারা জুতোর নীচে বীভৎস কাদার পিণ্ড যেন চিরকালের মতো অত্যাচারের চিহ্ন রেখে গিয়েছিল
আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে ।
"অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান"
— কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো ।
উঃ-
কবি জয় গোস্বামীর লেখা 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতায় বর্ণিত হয়েছে যুদ্ধের বিরুদ্ধে
গানের প্রয়োগ কথা । মানুষের পীড়ন-আর্তনাদের কলরোল গানের সুরের প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দিতে
হবে । সমস্ত ক্ষমতা, হিংস্রতা ও দম্ভকে বশ করার জন্য গানই কবির বন্ধু হয়ে উঠেছে ।
অস্ত্রের উদ্ধত আক্রমণকে রুখতে কবি গানকে অবলম্বন করেছেন । কবি চান উদার মানবিকতার
সুউচ্চ আদর্শের অনুরণনে সমাজের বুকে উদ্যত অস্ত্রের ঝংকার বন্ধ হোক । কবির বিশ্বাস
গানের সুরে তাড়ানো যায় বুলেট । আর যুদ্ধ নয় এবার হোক মানবতার জয় । একমাত্র গানই
পারে সেই জয়কে ঘোষিত করতে, কারণ গান মানুষের অনাবিল ভালোবাসার প্রকাশ । যারা রক্তচক্ষুর
শাসন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারাও একদিন গানের পায়ে অঞ্জলি দেবে সব অস্ত্র — এটাই কবির
বিশ্বাস । তাই কবি দৃঢ় ভঙ্গিতে বলতে পেরেছেন —"অস্ত্র ফ্যালো,অস্ত্র রাখো পায়ে
।"
"আমরা কালিও তৈরি করতাম
নিজেরাই ।" — কারা কালি তৈরি করতেন ? তাঁরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন ?
উঃ- প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ও তাঁর সতীর্থরা কালি তৈরি করতেন । ♦ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ও তাঁর সতীর্থরা নিজেরাই কালি তৈরি করতেন । যদিও তাঁর মা, পিসি ও দিদিরা এই কালি তৈরি করতে সাহায্য করতেন । এই কালি তৈরি করা নিয়ে প্রাচীনেরা বলতেন— "তিল ত্রিফলা শিমুল ছালা / ছাগ দুগ্ধে করি মেলা / লৌহ পাত্রে লোহায় ঘসি / ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি ।" ভালো কালি তৈরি করতে গেলে এই ছিল ব্যবস্থাপনা । প্রাবন্ধিকরা এত কিছুর আয়োজন করতে পারতেন না, তাই তাঁরা সহজ কালি তৈরির পদ্ধতি অবলম্বন করতেন । বাড়ির রান্না হত কাঠের আগুনে, সেখানে রান্নার পর কড়াইয়ের নীচে প্রচুর কালি জমত । লাউপাতা দিয়ে তা ঘষে তুলে একটা পাথরের বাটিতে রেখে তাঁরা জল দিয়ে গুলতেন । এভাবেই প্রাবন্ধিকরা কালি তৈরি করতেন । তবে যারা কালি তৈরিতে ওস্তাদ ছিল, তারা ওই কালো জলে হরতকী ঘষত । কখনো কখনো আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তা বেটে ওই কালো জলে মেশাত । সব ভালোভাবে মেশানোর পর খুন্তির গোড়ার দিকটা পুড়িয়ে লাল টকটকে করে সেই জলে ছ্যাঁকা দিত জল ফোটানোর জন্য । কিছু সময় টগবগ করে ফোটানোর পর ন্যাকড়ায় ছেঁকে দোয়াতে ঢেলে নিলেই লেখার জন্য কালি প্রস্তুত হয়ে যেত ।
"পাশ্চাত্য দেশের তুলনায়
এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য ।" — লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী
?
উঃ-
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান যারা পড়েন, তাদের স্বরূপ নির্ণয় করতে গিয়ে লেখক বৈজ্ঞানিক
প্রবন্ধের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন । প্রথম শ্রেণি, যাঁরা ইংরেজি জানেন না
বা খুব অল্প জানেন, দ্বিতীয় শ্রেণি যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজি ভাষায় কিছু বিজ্ঞান
বই পড়েছেন । পাশ্চাত্যের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে এ দেশের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের
সীমাবদ্ধতার কথা তিনি বলেছেন । বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচয় না থাকলে
কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বোঝা সম্ভব নয় । ইউরোপ আমেরিকায় পপুলার সায়েন্স লেখা খুব
সহজ, কারণ সাধারন মানুষ অনায়াসে তা বোঝে । কিন্তু আমাদের দেশের সামাজিক পরিস্থিতি
এতটা সহজ নয় । এখানে বয়স্কদের জন্য যা লেখা হয়, তা প্রাথমিক বিজ্ঞানের মতো গোড়া
থেকে না লিখলে তাঁদের বোঝাবার মতো সহজ হয় না । বাংলা ভাষায় যাঁরা বিজ্ঞান বিষয়ক
লেখালেখি করেন, তাঁদের জনপ্রিয়তা পেতে গেলে এই বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে । বিজ্ঞানশিক্ষার
বিস্তার ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে প্রাবন্ধিক এই কথাগুলো বলেছেন । মনে রাখা
দরকার যে, বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার যথাযথ না হলে বিজ্ঞান বিষয়ক সাহিত্যের বিকাশ ঘটাও
সম্ভব নয় ।
"বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে
ত্যাগ করবেন না ।" — কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে ? কোন দুর্দিনের জন্য তাঁর
এই আবেদন ?
উঃ-
বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের 'সিরাজউদ্দৌলা' নাট্যাংশে বাংলার শেষ স্বাধীন
নবাব সিরাজদৌলা সিপাহসলার মীরজাফর ও তার অনুগামীদের উদ্দেশ্য এ কথা বলেছেন । ♦ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমশঃ
তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে । কলকাতা এবং কাশিমবাজারে তাঁদের দুর্গনির্মাণ অব্যাহত
। এর মধ্যে সিরাজের বিরুদ্ধে স্বয়ং মীরজাফর ও ঘসেটি বেগম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন
। বিচক্ষণ সিরাজ বুঝেছেন এই পরিস্থিতিতে তাঁর ধৈর্য হারালে চলবে না । নিজেকে সংযত রেখে
মনোমালিন্য মিটিয়ে নিতে হবে । তাই মীরজাফর ও তার অনুগামীদের যাবতীয় অভিযোগ নিজে মাথা
পেতে নিয়ে তিনি সোহার্দ্য স্থাপনে প্রয়াসী হয়েছেন । নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে
মীরজাফরকে বাংলার ঘোর দুর্দিনে সঙ্গ ত্যাগ না করার আবেদন জানিয়েছেন ।
"ওখানে কী দেখচ মুর্খ,
বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো !" — বক্তা কে ?
উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনোভাব লক্ষ করা যায় ?
উঃ- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত 'সিরাজদৌলা' শীর্ষক নাট্যাংশের অন্তর্গত উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ঘসেটি বেগম । ঘসেটি বেগমের প্রকৃত নাম মেহেরুন্নিসা । তিনি নবাব আলিবর্দি খাঁ-র বড়ো মেয়ে, সম্পর্কে সিরাজের মাসি । ঢাকার শাসনকর্তা শাহমৎ জঙ্গের সঙ্গে ঘসেটির বিয়ে হয় । দত্তক পুত্র ইকরমের মৃত্যু হলে তার শোকে শাহমৎ জঙ্গও মারা যান । বিধবা ঘসেটি বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন । এদিকে বাংলার শাসনভার আলীবর্দী খাঁর মনোনীত সিরাজদৌলার হাতে যায় । এই ঘটনা ঘসেটি বেগমের ঈর্ষার কারণ হয় । তিনি আলিবর্দির মেজো মেয়ের ছেলে শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন । বাংলার নবাব আলিবর্দির মৃত্যুর পরে ঘসেটি রাজবল্লভ ও অন্যদেরও নিজের দলে টানেন । এসব জানতে পেরে ক্ষিপ্ত সিরাজ ঘসেটির মতিঝিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন এবং তাঁকে নিজের রাজপ্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন । তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন । শওকত জঙ্গ সিরাজের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় । ঘটনাক্রমে ঘসেটি বেগম প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন । কিন্তু তাঁর ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের সমস্ত রাস্তা একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত ঘসেটি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে যান ।
“আপনি আমার থেকে চার হাজার
গুণ বড়ােলােক, কিন্তু চার লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন
না।”- বক্তা কাকে, কেন একথা বলেছিলেন? ১+৪ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তরঃ
মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে জুপিটার ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ গঙ্গার ঘাটে ম্যাসাজ
নিতে আসা বিষ্টুচরণ ধরকে এই কথাগুলি বলেছিলেন। বছর চল্লিশের বিষ্টুচরণ বনেদি বংশের
লোক। খান সাতেক বাড়ি, বড়োবাজারে ঝাড়ন মশলার দোকান এবং সর্বোপরি একটি সাড়ে তিন মণ দেহের
মালিক সে। সপ্তাহে একদিন সে গঙ্গার ঘটে আসতো ম্যাসাজ করবার জন্য। বারুণীর দিন গঙ্গায়
চান করতে এসে বিষ্টু ধরের চর্বি-বহুল শরীরে মালিশের বহর দেখে ক্ষিতীশ বিদ্রুপ করেছিলেন।
প্রথমে চোখের চাহনিতে, তারপর হাসিঠাট্টার মাধ্যমে তিনি বিষ্টুকে উত্তপ্ত করছিলেন। ক্ষিতীশ
নিজে থেকেই তার প্রেসার, সুগার, কোলেস্টেরল লেবেল জানতে চান। তার দেহের স্থূলতা যে
হার্টের পক্ষে ক্ষতিকর সেকথা বলেই পরক্ষণে ক্ষিতীশ তাকে হাতি এবং হিপোর সঙ্গে তুলনা
করে বসেন। বিষ্টু বিরক্তি প্রকাশ করলেও মনে মনে ভয় পায় এবং ক্ষিতীশকে জিজ্ঞাসা করে,
“আমি কি মরে যেতে পারি?” ক্ষিতীশ তার থেকে বয়সে বড় হলেও শারীরিকভাবে অনেক বেশি সক্ষম।
বিষ্টু ধরের মতো ক্ষিতীশের অর্থকৌলিন্য ছিলনা ঠিকই কিন্তু নিয়মিত শরীরচর্চা করে তিনি
শরীরটাকে নিজের চাকর বানিয়ে ফেলেছিলেন। বিষ্টু ধর ক্ষিতীশের থেকে ঢের গুণ বড়লোক হলেও
তার মতো দৌড়ঝাঁপ করার ক্ষমতা ছিল না। এইজন্য ক্ষিতীশ তাকে একথা বলেছিলেন।
"এটা বুকের মধ্যে পুষে
রাখুক ।" — কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে ? কী কারণে এই পুষে রাখা ?
উঃ-
'কোনি' উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছিলেন । সেখানে
তিন ঘন্টা ঘোরার পর দুজনে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবার খেতে বসেছিল । কিন্তু তাদের সঙ্গে
খাবার জল ছিল না । এমত অবস্থায় কোনি তাদের পাশে খেতে বসা ছাত্রীদলের কাছে জল চাইতে
যায়, কিন্তু একজন দিদিমণি তাকে ফিরিয়ে দেয় । পরে ওই দলের হিয়া মিত্র নামের একটি
মেয়ে কোনিকে জল দিতে আসলে কোনি আগের অপমানের জবাব হিসেবে ওই জলের গ্লাস ফেলে দেয়
। হিয়ার প্রতি কোনির যে আক্রোশ প্রকাশ পেল জলের গ্লাস ফেলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাগটাই
মনের মধ্যে পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে । ♦ কোনি হিয়া মিত্রকে চিনত না, কিন্তু ক্ষিতীশ সিংহ এই হিয়া
মিত্রকে চিনত । শুধু চিনতই না, সে জানত কোনির থেকে হিয়া মিত্র সাঁতারে অনেক ভালো অবস্থানে
আছে । রবীন্দ্র সরোবরের সাঁতার প্রতিযোগিতায় হিয়ার সাঁতার ক্ষিতীশ সিংহ দেখেছে । বালিগঞ্জ
সুইমিং ক্লাবে গিয়েও সে হিয়ার ট্রেনিং দেখে এসেছে । তাই ক্ষিতীশ সিংহ মনে করেছিল হিয়াই
কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বি । এই অপমানের যন্ত্রণাই কোনিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে । তাই
হিয়া মিত্রকে হারিয়ে অপমানের প্রতিশোধ নেবার বাসনা জাগিয়ে রাখবার জন্যই ক্ষিতীশ
সিংহ এই অপমানটাকে পুষে রাখতে বলেছিল ।
'কোনি' উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে
স্বামীর যোগ্য সহধর্মিনী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও ।
উঃ-
মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাসটি মূলত কোনি এবং তাঁর প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহকে কেন্দ্র
করেই আবর্তিত হয়েছে । পার্শ্বচরিত্র হিসেবে অনেকেই এসেছেন । তাঁদের মধ্যে ক্ষিতীশ
সিংহের স্ত্রী লীলাবতী অন্যতম ।
পরিশ্রমী ও কর্মপটু : ছোটখাটো চেহারার,
গৌরবর্ণা এবং গম্ভীর স্বভাবের লীলাবতী যথেষ্ট পরিশ্রমী । তাঁর সাংসারিক জ্ঞান ও সমস্ত
কিছু দেখভাল করার জন্যই ক্ষিতীশ সিংহের সংসার টিকে ছিল । লীলাবতীর কর্মতৎপরতাতেই তাঁদের
সংসার চলত । 'সিনহা টেলারিং' যখন লোকসানের মুখে সেই সময় লীলাবতী নিজের গয়না বন্ধক
রেখে নতুন ধরনের কাজ শুরু করেন । এসময় তিনি দোকানের নাম পালটে 'প্রজাপতি' রেখে অসম্ভব
পরিশ্রম ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে চার বছরের মধ্যেই 'প্রজাপতি'র শ্রীবৃদ্ধি ঘটান ।
ব্যবসায়ী মানসিকতাসম্পন্ন : ব্যবসায়িক মনের
পরিচয় দিয়ে তিনি পুরুষদের পোশাক তৈরি বন্ধ করে দুজন মহিলা কর্মচারীকে দোকানে রেখে
শুধু মেয়ে ও শিশুদের পোশাক তৈরি শুরু করেন । তাঁর নেতৃত্বেই ব্যবসা ক্রমশ বড়ো হয়ে
ওঠে এবং আরও বড়ো স্থানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে । সেক্ষেত্রেও তিনি নিজেই হাতিবাগানের
মতো এলাকায় পাঁচ হাজার টাকার সেলামিতে একটি ভাড়ার দোকানের ব্যবস্থা করেন ।
যোগ্য সহধর্মিনী : গম্ভীর স্বভাবের
হলেও লীলাবতী স্বামীর প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল এবং পতিপ্রাণা ছিলেন । স্বামীর স্বভাব
এবং সাঁতারপ্রীতির কথা জানতেন বলেই সাংসারিক ও ব্যবসায়ীক সমস্তরকম দেখভাল নিজেই করতেন
। স্বামীর আদর্শ বা ভাবনা মেনে নিয়েই তাঁরই ইচ্ছামতো খাওয়ার পদ্ধতিও প্রায় মেনে
নিয়েছিলেন । স্বামীর পরিশ্রমী সত্তার প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অটুট ছিল বলেই তিনি
কোনির সাঁতার দেখতে হাজির হয়েছিলেন । স্বল্প পরিসরেও তাঁর কর্মপ্রাণা, সংসারী এবং
পরোক্ষে স্বামী অনুরাগী চরিত্রটি উপন্যাসে ধরা পড়েছে ।
"বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে,
কিন্তু শখ ষোল আনাই বজায় আছে ।" — বাবুটি কে ? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও ।
উত্তর:- কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা "পথের দাবী" উপন্যাসে যে বাবুটির কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশধারী রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিক । ♦ গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশধারী সব্যসাচী মল্লিককে পুলিশ থানায় ধরে আনেন । কারণ রাজবিদ্রোহী সব্যসাচীর নামে ওয়ারেন্ট ছিল । তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের পদস্থ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রেঙ্গুনে এসেছেন । এই সময় পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু ও অপূর্ব থানায় উপস্থিত ছিলেন । নিমাইবাবু এসেছেন সব্যসাচী মল্লিককে গ্রেপ্তার করার জন্য আর অপূর্ব এসেছেন তার বাড়িতে চুরি হয়ে যাওয়া বিষয়ে পুলিশকে জানাতে । গিরীশ মহাপাত্রের শরীর-স্বাস্থ্য দেখে তাঁর জীবনের মেয়াদ বেশি দিন নেই বলে অপূর্বর মনে হয়েছিল । গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা সাধারণ মানুষের মতো হলেও অদ্ভুত ছিল তার চোখ দুটো । শরীর রুগ্ন, দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত, বয়স ত্রিশ-বত্রিশের বেশি নয় । রুগ্ন ও দুর্বল শরীর হলেও তার চোখের দৃষ্টি ছিল অত্যন্ত গভীর জলাশয়ের মতো । তার বেশভূষা ও ছিল অদ্ভুত । মাথার সামনের দিকে চুল বড়ো আর ঘাড়ে কানের দিকে খুব ছোট করে ছাঁটা । মাথার চুলে জবজবে করে নেবুর তেল মাখা । যার উৎকট গন্ধে ঘর ভরে উঠেছিল । গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, বুক পকেটে ছিল বাঘ আঁকা রুমাল । পরনে ছিল বিলেতি মিলের মখমল পাড়ের সুক্ষ্ম শাড়ি । পায়ে ছিল সবুজ রঙের ফুল মোজা । পায়ে ছিল বার্নিশ করা পাম-শু যার তলাটা টেকসই করার জন্য লোহার নাল দিয়ে বাঁধা, হাতে ছিল এক গাছি হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি । তবে সবকিছুই ছিল নোংরা । কয়েকদিনের জাহাজ যাত্রার ধকলে এগুলো নোংরা হয়ে গিয়েছিল । সবকিছু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে গিরিশ মহাপাত্র বেশ ভালোরকম শখের মানুষ ছিলেন ।
“অথচ আপনি একেবারে খাঁটি সন্ন্যাসীর
মতো সব তুচ্ছ করে সরে পড়লেন?”—কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কীভাবে ‘খাঁটি সন্ন্যাসীর
মতো ব্যবহার করেছিলেন সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর:
আলোচ্য উদ্ধৃতি টি সুবোধ ঘোষের বহুরুপি গল্পে বর্ণিত রয়েছে, এখানে হরিদার কথা বলা
হয়েছে। তিনি একেবারে খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সাজ সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন।
হরিদা খাঁটি সন্ন্যাসীর মত আদুড় গা, তার উপর ধবধবে সাদা উত্তরীয়, ছোট বহরের একটি
সাদা থান পড়ে একেবারে খাঁটি সন্ন্যাসীর মত সেজে জগদীশ বাবুর বাড়ি যান। সন্ন্যাসী
জগদীশ বাবুর বাড়িতে আসে এবং জগদীশ বাবু সন্ন্যাসীর সেবা করার সকল প্রচেষ্টা করেন।
বিরাগীর পা স্পর্শ করার জন্য জগদীশ বাবুর হাত দুটো ছটফট করছিল। সন্ন্যাসী জগদীশ বাবুকে
কিছু উপদেশ দেন এবং চলে যাওয়ার কথা বলেন। সেই সময় জগদীশ বাবু বিরাগীকে একটা মিনিট
দাঁড়াতে বলেন। জগদীশবাবু একটি থলি আনে যার মধ্যে নোটের তারা। সেই থলিটি বিরাগীর পায়ের
কাছে রেখে দেন এবং ব্যাকুল ভাবে প্রার্থনা করেন- “এই প্রণামী, এই সামান্য একশো এক টাকা
গ্রহণ করে আমাকে শান্তি দান করুন বিরাগীজি।” কিন্তু বিরাগীজি
একশো এক টাকার থলিটির দিকে না তাকিয়ে সিড়ি থেকে নেমে গেলেন। তিনি জগদীশ বাবুর দেওয়া
টাকা টার দিকে তাকালেন না। একজন সত্য় বিরাগী সন্ন্যাসী যেমন টাকা, ধনকে ত্যাগ করে
দেয় ঠিক তেমনি সন্ন্যাসীর মান রক্ষার্থে সেই টাকাকে এড়িয়ে চলে আসেন।
'এল ওরা মানুষ ধরার দল'— তাদের
আগমনের আগে আফ্রিকার স্বরূপ কেমন ছিল ?
উত্তর:- উদ্ধৃত লাইনটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'আফ্রিকা' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে । এখানে ওরা বলতে সাম্রাজ্যবাদী শাসক ইউরোপীয়দের কথা বলা হয়েছে । ইউরোপীয় শক্তির আগমনের পূর্বে আফ্রিকা আপন ঐতিহ্যে, সংস্কৃতিতে এবং মানবিকতায় ছিল সুমহান । নিবিড় বনস্পতির পাহারায় ছিল বলে, রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকাকে 'ছায়াবৃতা' বলে সম্বোধন করেছেন । আফ্রিকার শিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য, লোককাব্যের গুরুত্ব অপরিসীম । অতীতের বিস্তীর্ণ আফ্রিকার সৌন্দর্য ও স্বকীয় ঐতিহ্যকে কবি 'প্রকৃতির দৃষ্টি অতীত জাদু' বলতে চেয়েছেন । আফ্রিকা তার নিজস্বতা দিয়েই অর্থাৎ বনস্পতির নিবিড় পাহারাতে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছিল । গভীর অরণ্যে পরিবৃত আফ্রিকার অধিবাসীরা ছিল কৃষ্ণাঙ্গ । বাইরের পৃথিবীর কাছে এরা ছিল উপেক্ষিত ও বঞ্চিত । তবে তাদের ছিল প্রকৃতির অফুরন্ত ঐশ্বর্য্য ও স্বকীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য । তারা রুদ্র প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রূপকে আস্তে আস্তে নিজেদের আয়ত্তে আনতে শেখে এবং সমস্ত শঙ্কাকেও হার মানাতে শেখে । আর ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যারা নেকড়ের চেয়ে ভয়ংকর, তীক্ষ্ণ নখ সম পৈশাচিক আচরণ করে, গর্বে অন্ধ হয়ে নির্মল মনের অধিকারী সরল মানুষকে ও তাদের সংস্কৃতিকে আঘাত করে, তারা কখনোই ক্ষমার যোগ্য নয় । মানবতাহীন মানুষ পশুর থেকেও অধম, হীন । সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এই ছিল প্রতিবাদ ।
0 Comments
Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box