সার্বিক
প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার প্রয়োগের সাফল্য ও সমস্যা
(স্থানীয় অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষা)
ভূমিকা
- গণতন্ত্রে ভোটাধিকার একটি অতি মূল্যবান অধিকার এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।তাই
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান উপাদান হল নির্বাচনি ব্যবস্থা। ভারতীয়
সমাজে জাতি-ধর্মবর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক
নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদানের নীতিকে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার বলে ধর্মের দোহাই
দিয়ে বা উচ্চ বা নীচ জাতি বিচার করে কোনো ব্যক্তিকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে
না। এই নীতি অনুসারে ভোটাধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে একটিমাত্র যোগ্যতা বিবেচিত হয়, তা
হল ভোটাধিকার লাভের জন্য ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট বয়ঃক্রমে উপনীত হতে হয়। অর্থাৎ
একটি নির্দিষ্ট বয়সে উপনীত প্রত্যেক ব্যক্তির ভোটদানের অধিকার থাকবে। এই সর্বনিম্ন
বয়ঃসীমা পৃথিবীরবিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ভারতে বর্তমানে
18 বছর বয়সী সকল ব্যক্তির ভোটাধিকার স্বীকৃত। আগে ভারতে এই বয়ঃসীমা ছিল 21 বছর ব্রিটেন,
আমেরিকা, গণপ্রজাতন্ত্রী চিন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া,রুমানিয়া, জার্মানি, যুগোশ্লাভিয়ার
মতো প্রভৃতি দেশে 18বছর বয়সী সকল ব্যক্তির ভোটাধিকার স্বীকৃত।বর্তমানে অধিকাংশ গণতান্ত্রিক
রাষ্ট্রে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের দাবি স্বীকৃত হয়েছে ।
স্বাধীন ভারতের সংবিধানের 326 নং ধারায় নাগরিকদের সার্বিক
প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভারতে আজ পর্যন্ত 16 টি সাধারণ
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই কাজটি
সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ভোটদাতাদের উপযুক্ত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন। ভারতে আজও বিপুল
সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্য, অজ্ঞতা আর অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সার্বিক
প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে প্রকল্প নির্মাণের বিষয়টি অত্যন্ত
তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রকল্পের
বিষয় ‘সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের
ভােটাধিকার প্রয়োগের সাফল্য ও সমস্যা (স্থানীয় অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষা)' প্রকল্পটির বিষয় হল স্থানীয়ভাবে প্রাপ্তবয়স্কের
ভোটাধিকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে সমীক্ষা করা। কোনো অঞ্চলে ভোটাধিকার প্রয়োগের
হার সম্পর্কেও অবহিত হওয়া যাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের বাসিন্দা যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, তারা কেন তা করেন সেসম্পর্কে
এবং যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন না, তারা কেন তা করেন না সেসম্পর্কে সমীক্ষা করা হবে।
এই সমীক্ষার দ্বারা ভোটাধিকারের প্রয়োগের সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া
যাবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য
‘সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের
ভোটাধিকার প্রয়োগের সাফল্য ও সমস্যা (স্থানীয়
অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষা)' প্রকল্পটির উদ্দেশ্যগুলি হল—
[1] জাতীয় স্তরে ভোটাধিকার
প্রয়োগের গড় হার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা,
[2] পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটদানের গড় হার সম্পর্কে
তথ্য সংগ্রহ করা,
[3] পশ্চিমবঙ্গের কোনো একটি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটদানের হার
সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা,
[4] সেই বিধানসভা কেন্দ্রের কিছু পরিবারের ভোটদানের হার সম্পর্কে
তথ্য সংগ্রহ করা,
[5] ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে কাজ করতে অভ্যস্ত করা,
[6] একঘেয়ে পড়াশােনা থেকে মুক্ত হয়ে ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা
লাভ করা।
প্রকল্পের
গুরুত্ব
‘সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার প্রয়োগের সাফল্য ও সমস্যা
(স্থানীয় অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষা)' প্রকল্পটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে
জাতীয়, রাজ্য ও স্থানীয়ভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের হার সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।
ভারতে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের সাফল্য সম্পর্কে যে সন্দেহ ছিল, সেই সন্দেহ
বাস্তবে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সেই চিত্রও পরিস্ফুট হয়। যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ
করেন, তাঁদের অভিমত এবং যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন না, তাদের অভিমত সম্পর্কেও ধারণা
গড়ে ওঠে৷ যাঁরা ভোটাধিকার প্রয়ােগ করেন, তারা কি নিজের থেকেই তা করেন, নাকি অন্য
কারুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে করেন—সেসম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করা যায়।
অন্যদিকে, যাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন না, তারা কেন তা করেন না সেসম্পর্কেও ধারণা
গড়ে ওঠে ।
প্রকল্প
রূপায়নের পরিকল্পনা
[1] সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার প্রয়োগের সাফল্য ও
সমস্যা (স্থানীয় অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষা)' প্রকল্পটির রূপায়ণের জন্য আমাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান
বিষয়ের মাননীয় শিক্ষক মহাশয়/মাননীয়া শিক্ষিকা মহাশয়ার নির্দেশমতো জাতীয় স্তরে
দ্বাদশ, ত্রয়োদশ, চতুর্দশ, পঞ্চদশ ও ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে ভোটদানের হার সম্পর্কে
তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়
[2] পশ্চিমবঙ্গের দ্বাদশ, ত্রয়োদশ, চতুর্দশ, পঞ্চদশ বিধানসভা
নির্বাচনে ভোটদানের হার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
[3] বিধানসভা কেন্দ্রেও ভোটদানের হার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের
পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
[4]পরিকল্পনায় ঠিক হয় যে বিধানসভা কেন্দ্রের 20 টি পরিবারের
20 জনের সঙ্গে কথা বলে ভােটদানের হার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
[5] এ ছাড়াও ঠিক হয় যে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই তথ্য সংগ্রহ
ও বিশ্লেষণের কাজ করবে। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজে সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনমতো
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক/শিক্ষিকার পরামর্শ নেওয়া হবে।
[6] তথ্য সংগ্রহের কাজে সুবিধার জন্য একটি প্রশ্নমালা তৈরি
করা হবে এবং প্রশ্নমালা অনুযায়ী তথ্য সংগৃহীত হবে।
[7] তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে প্রাপ্ত তথ্য বিচারবিশ্লেষণ
করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। পরবর্তীকালে শিক্ষক মহাশয়/শিক্ষিকা মহাশয়ার স্বাক্ষর
করিয়ে নিয়ে নির্দেশানুযায়ী তা মূল্যায়নের জন্য জমা দেওয়া হবে।
পদ্ধতি
এই প্রকল্পের কাজে পাড়ার বা ওয়ার্ডের মোট 20 টি পরিবারের
20 জন সদস্যকে প্রথমেই বেছে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে শিক্ষিত, অশিক্ষিত এবং শুধুমাত্র
সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন—এই তিন শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচন
করা হয়েছে। এদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়। এই প্রশ্নমালার
মধ্যে যেসব প্রশ্ন রাখা হয় সেগুলি হল ---
[1] আপনি কি নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেন,
[2] আপনি কি অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোট দেন,
[3] ভোটদানে আপনার কি তেমন আগ্রহ নেই,
[4] আপনি কি মনে করেন ভোটদান একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার
এবং এই কারণে ভোটদানে বিপুল আগ্রহ বোধ করেন,
[5] ভোট দানের ব্যাপারে আগ্রহ থাকলেও আপনি কি একে গুরুত্বপূর্ণ
অধিকার বলে মনে করেন না,
[6] ভোট দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে আপনার কি কোনোরকম আগ্রহ
নেই,
[7] ভোট দেওয়ার সময় আপনি কি টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধা নিতে
আগ্রহী,
[8] ভোট দেওয়ার সময় কোনোরকম টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধা নিতে
আপনি কি আদৌ আগ্রহী নন,
[9] ভোট দেওয়ার সময় টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধার ব্যাপারে আগ্রহী
না হলেও কেউ তা দিলে আপনি কি গ্রহণ করেন,
[10] ভোটদানের ক্ষেত্রে আপনি কি আপনার স্বামী বা গৃহকর্তার
মতামত দ্বারা প্রভাবিত হন,
[11] ভোটদানের সময় একজন মহিলা ভোটার হিসেবে আপনি কি নিজের
সিদ্ধান্ত নিজেই প্রয়োগ করেন,
[12] ভোটাদানের সময় একজন মহিলা হিসেবে আপনি কি আপনার স্বামী
বা পুত্রের সঙ্গের অগ্রিম পরামর্শ করেন,
[13] ভোটদানের ক্ষেত্রে আপনি কি ধর্মের প্রভাব বা জাতপাত-সংক্রান্ত
বিষয় মেনে চলেন,
[14] ভোটদানের ক্ষেত্রে আপনি কি জাতপাত বা ধর্মের প্রভাব ছাড়াই
নির্ভয়ে ভোট দেন,
[15] ভোটদানের ক্ষেত্রে আপনি কি জাতপাত বা ধর্মের প্রভাবকে
এড়াতে পারেন না।
পরীক্ষামূলক
তথ্য
যে বিষয়গুলির ওপরে পর্যালোচনা করে তথ্য সংগ্রহ করা হয় সেগুলি
হল ----
[1] ভোটদানে নিজস্ব সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা এবং অকার্যকারিতা,
[2] একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে ভোটদানের মূল্যায়ন,
[3] আর্থিক প্রলোভন ও ভোটদান,
[4] ভোটদানের ক্ষেত্রে পরিবারের মহিলাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত
প্রয়োগ,
[5] ভোটদানের ক্ষেত্রে জাতপাত বা ধর্মের প্রভাব ।
(3) তথ্য সংগ্রহ শিক্ষক মহাশয়/শিক্ষিকা মহাশয়ার নির্দেশমতো
তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। প্রয়োজনীয় সংগৃহীত তথ্যগুলি সারণি চিত্রের মাধ্যমে দেখানো
হল
সারণি-i (ক)
ভোটদানে নিজস্ব সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা বা অ-কার্যকারিতা
মোট উত্তরদাতা 20 জন |
নিজের পছন্দ মতো প্রার্থীকে ভোট দেন |
নিজের পছন্দ-অপছন্দের কোন সুযোগ থাকে না, অন্যদের
দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোট দেন |
ভোটদানে তেমন কোন আগ্রহ নেই |
মোট |
10 |
6 |
4 |
20 |
|
50% |
30% |
20% |
100% |
সারণি-i (খ)
একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে ভোটদানের মুল্যায়ন
মোট উত্তরদাতা 20 জন |
ভোট দেওয়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার বলে মনে করেন |
ভোট দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ আছে,কিন্তু একে গুরুত্বপূর্ণ
অধিকার বলে মনে করেন না |
ভোট দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে কোনোপ্রকার আগ্রহ
নেই |
মোট |
8 |
8 |
4 |
20 |
|
40% |
40% |
20% |
100% |
সারণি-i (গ)
আর্থিক প্রলোভন ও ভোটদান
মোট উত্তরদাতা 20 জন |
ভোট দেওয়ার সময় টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধা নিতে আগ্রহী
|
ভোট দেওয়ার সময় কোনোরকম টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধা নিতে আগ্রহী নন |
ভোট দেওয়ার সময় টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধা নিতে আগ্রহী
না হলেও কেও তা দিলে গ্রহন করে |
মোট |
8 |
10 |
2 |
20 |
|
40% |
50% |
10% |
100% |
সারণি-i (ঘ)
ভোটদানের ক্ষেত্রে পরিবারের মহিলাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত প্রয়োগ
মোট উত্তরদাতা 20 জন |
ভোটদানের ক্ষেত্রে পরিবারের মহিলাদের গৃহকর্তারা প্রভাবিত
করে |
ভোটদানের ক্ষেত্রে মহিলারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই
প্রয়োগ করেন, কারও দ্বারা প্রভাবিত হন না |
ভোটদানের ক্ষেত্রে মহিলারা স্বামী বা পুত্রের অগ্রিম
পরামর্শ গ্রহন করেন |
মোট |
10 |
4 |
6 |
20 |
|
50% |
20% |
30% |
100% |
সারণি-i (ঙ)
ভোটদানের ক্ষেত্রে জাতপাত বা ধর্মের প্রভাব
মোট উত্তরদাতা 20 জন |
ভোটদানের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রভাব বা জাতপাতকে মেনে
চলেন |
জাতপাত বা ধর্মের প্রভাব ছাড়াই নির্ভয়ে ভোট দেন |
ভোটদানের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রভাব বা জাতপাতকে এড়াতে
পারেন না |
মোট |
4 |
12 |
4 |
20 |
|
20% |
60% |
20% |
100% |
বিশ্লেষণ
সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার প্রয়োগ, সাফল্য ও ব্যর্থতা
বিষয়ে
প্রথম সারণি
চিত্রে 1.
(ক) ভোটদানে নিজস্ব সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা বা অ কার্যকারিতার
বিষয়টিকে দেখানো হল| এই সারণি চিত্রে মোট 20 জন উত্তরদাতার মধ্যে 10 জন উত্তরদাতা
নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিকে ভোট দেন, 6 জন উত্তরদাতা অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হন এবং
4 জন উত্তরদাতা ভোটদানে তেমন কোনো আগ্রহ দেখান না।
দ্বিতীয়
সারণি চিত্রে 1.
(খ) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে ভোটদানের বিষয়টিকে
দেখানো হয়েছে। এই সারণিতে মোট 20 জন উত্তরদাতার মধ্যে ৪ জন উত্তরদাতা ভােট দেওয়াকে
একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার বলে মনে করেন এবং এই কারণে বিপুল আগ্রহ বোধ করেন, ৪ জন উত্তরদাতার
ভোট দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ আছে কিন্তু একে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার মনে করেন না এবং 4 জন
উত্তরদাতা ভোট দেওয়া বা না কোনােরূপ আগ্রহ দেখাননি।
তৃতীয়
সারণি চিত্রে 1.
(গ) আর্থিক প্রলোভন এবং ভোটদানের বিষয়টিকে দেখানো হয়েছে।
এখানে 20 জন উত্তরদাতার মধ্যে ৪ জন উত্তরদাতা ভোট দেওয়ার সময় টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধা
নিতে আগ্রহী, 10 জন উত্তরদাতা এই বিষয়ে আগ্রহী নন এবং 2 জন উত্তরদাতা ভোট দেওয়ার
সময় টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধার ব্যাপারে আগ্রহী না হলেও কেউ দিলে তা প্রত্যাখ্যান
করেন না বলে জানান।
চতুর্থ
সারণি চিত্রে 1.
(ঘ) ভোটদানের ক্ষেত্রে পরিবারের মহিলাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত
কার্যকারী হয় কি না সে বিষয়টি দেখানো হয়েছে। এখানে 20 জন উত্তরদাতার মধ্যে 10 জন
উত্তরদাতা ভোটদানের ক্ষেত্রে পরিবারের মহিলাদের প্রভাবিত করেন,
4 জন উত্তরদাতা জানিয়েছেন, নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই প্রয়োগ করেন, কারও দ্বারা প্রভাবিত হন না, এবং 6 জন উত্তরদাতা জানিয়েছেন পরিবারের মহিলারা ভোটদানের ক্ষেত্রে স্বামী বা পুত্রের অগ্রিম পরামর্শ নিয়ে থাকেন।
পঞ্চম সারণি
চিত্রে 1.
(ঙ) ভোটদানের ক্ষেত্রে ধর্ম বা জাতপাতের প্রভাবকে দেখানো হয়েছে।
এই সারণি চিত্রে মোট 20 জন উত্তরদাতার মধ্যে 4 জন উত্তরদাতা ভোটদানের ক্ষেত্রে ধর্ম
বা জাতপাতের প্রভাব মেনে চলেন, 12 জন উত্তরদাতা ধর্মের প্রভাব ছাড়াই নির্ভয়ে ভোট
দেন এবং 4 জন উত্তরদাতা ভোটদানের ক্ষেত্রে জাতপাত বা ধর্মের প্রভাবকে এড়াতে পারেন
না। সারণি চিত্রগুলির দ্বিতীয় সারিতে প্রত্যেকটির শতকরা হার নির্ধারণ করে দেখানো হয়েছে।
সিদ্ধান্ত
উল্লিখিত সারণি চিত্রগুলি পর্যালোচনার শেষে এ কথা বলা যায়
যে, ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যতই জাতপাত, ধর্মগত বা ভাষাগত সমস্যার কথা বলা হোক
না কেন নির্বাচনি ব্যবস্থায় সমাজের সকল স্তরের মানুষের সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের
প্রয়োগ ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মর্যাদা দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার ভারতবর্ষকে একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদা
দান করেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা থাকলেও সামগ্রিকভাবে ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার
সাফল্যে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের নীতি যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে
তা এই সমীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায়। আমাদের এই প্রকল্পের সমীক্ষায়
সারণি চিত্রের বিশ্লেষণে যেটা ধরা পড়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে 50 শতাংশ উত্তরদাতা ভোটের
সময় কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজের পছন্দমতো
প্রার্থীকে ভোট দেন। সংখ্যাটি কিন্তু উপেক্ষণীয় নয়। আমাদের দেশের গড় ভোটের হারের
দিকে তাকালে একে উৎসাহব্যঞ্জক বলা যেতে পারে। যদিও ভোটদানের অধিকারকে এখনও বেশিরভাগ
উত্তরদাতা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকারের মর্যাদা দেননি। সমীক্ষায় ইতিবাচক যে দিকটি
ধরা পড়েছে তা হল প্রায় 50 শতাংশ উত্তরদাতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা ভোটের সময়
কোনোরকম টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধা নিতে আগ্রহী নন। বিষয়টি নিঃসন্দেহে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের
ভোটাধিকারের
একটি উজ্জ্বল সাফল্যের দিক। তবে এখনও অবধি যেটা অন্তরায় হিসেবে থেকে গেছে তা হল পরিবারের
মহিলাদের ভোটদানের বিষয়টি। বেশিরভাগ মহিলা গৃহকর্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোটাধিকার
প্রয়োগ করেন বলে জানিয়েছেন। সবশেষ সারণিটিতে
যে চিত্রটি ধরা পড়েছে যা এই সমীক্ষার অন্যতম আলোকিত একটি দিক তা হল, প্রায় 60 শতাংশ
উত্তরদাতা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন ভোটের সময় তারা জাতপাত বা ধর্মের প্রভাব ছাড়াই নির্ভয়ে
ভোট দেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এটি একটি উজ্জ্বল দিক| সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের
ভােটাধিকারের সফল রূপায়ণে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তথ্যসূত্র
[1] নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট,
[2] নির্বাচিত পরিবারগুলির সঙ্গে সাক্ষাৎকার।
কৃতজ্ঞতা
স্বীকার
আমি সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের বিদ্যালয়ের মাননীয়
শিক্ষক/মাননীয়া শিক্ষিকা শ্ৰী/শ্রীমতি ...... প্রতি। তার আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এই
কাজটি শেষ করে আমার পক্ষে প্রতিবেদন লেখা সম্ভবপর হত না। আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সেইসব
পরিবারের প্রতি যাঁরা তাদের সময় ব্যয় করে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন| সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা
জানাই প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা সহ অন্যান্য সকল শিক্ষক/শিক্ষিকাদের যাঁরা প্রত্যক্ষ
বা পরোক্ষভাবে আমাকে প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন। আমার সহপাঠীরা যারা
প্রকল্প রূপায়ণের কাজে কোনো-না কোনোভাবে সাহায্য করেছে তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।
ছাত্র/ছাত্রীর স্বাক্ষর শিক্ষক/শিক্ষিকার স্বাক্ষর