উত্তর : আগ্রহ একটি মানসিক প্রক্রিয়া। একে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মনােবিজ্ঞানী জোন্স বলেছেন,
আগ্রহ বলতে আমরা বুঝি বাস্তব বা কাল্পনিক কোনাে বস্তু বা অবস্থার প্রতি আনন্দের অনুভূতি, যা ব্যক্তিকে কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করে।
মনােবিদ ম্যাকডুগাল—এর মতে,
আগ্রহ হলাে সুপ্ত মনােযােগ।
মনােবিজ্ঞানী ড্রেভার এর মতে,
আগ্রহ হলাে গতিশীল মনােভাব। সব মিলিয়ে, “আগ্রহ হলাে একটি মানসিক সংগঠন, যা ব্যক্তিকে কোনাে বিশেষ ধরনের কাজের প্রতি মনােনিবেশ করতে এবং তা সম্পাদন করতে প্রেরণা জোগায়।
◆ শিক্ষায় আগ্রহের গুরুত্ব : শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুর আগ্রহ বা অনুরাগ (interest) বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। শ্রেণি শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীর মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযােগী বিষয় সম্পর্কে আগ্রহ সঞ্চার করতে পারেন তা শিক্ষার্থীর পক্ষে মঙ্গলজনক হয়। শিক্ষায় শিশুর আগ্রহের কয়েকটি প্রয়ােজনীয় দিক হলাে—
প্রথমত, শিক্ষণীয় বিষয়ে শিশু যদি আগ্রহ বােধ করে, সেক্ষেত্রে শিশুর আনন্দদায়ক অনুভূতি আসে। তাই বস্তু বা কর্মকেন্দ্রিক এই অনুভূতি শিক্ষাকে কার্যকর করে।
দ্বিতীয়ত, আগ্রহ কোনাে নিষ্ক্রিয় মানসিক সংগঠন নয়। এর সঙ্গে যুক্ত ক্ষোভিক অনুভূতি কোনাে কাজের শক্তি জোগায়। অর্থাৎ আগ্রহ প্রেষণা সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এই প্রেষণা শিখনের অন্যতম প্রধান শর্ত।
তৃতীয়ত, আগ্রহ শিশুকে সক্রিয় করে তােলে। সক্রিয়তা শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থত, শিশুর আগ্রহ বা অনুরাগ তার সেন্টিমেন্ট দ্বারাও প্রভাবিত হয়। সেন্টিমেন্ট হলাে শিশুর প্রাক্ষোভিক প্রবণতা। এটাও অভিজ্ঞতার প্রভাবে গড়ে ওঠে।
পঞ্চমত, শিশুর আগ্রহ অনেক সময় তাকে নতুন কিছু সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত করে। সৃজনশীল ব্যক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলাে নতুন সৃষ্টির প্রতি আগ্রহ।
ষষ্ঠত, শিশুর আগ্রহ সমাজ পরিবেশের দ্বারাও প্রভাবিত হয়। সামাজিক পরিবেশে বাস করতে গিয়ে শিশু সামাজিক আচরণগুলি আয়ত্ত করে।
সপ্তমত, শিশুর আগ্রহের যথাযথ অনুশীলনই তাকে ভবিষ্যৎ জীবনে সফল হতে সাহায্য করে।
■ মন্তব্য : আগ্রহের বৈশিষ্ট্যগুলি শিক্ষার পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিশুর মনে জ্ঞান আহরণের প্রতি আগ্রহ সঞ্চার করতে পারলে তা সারাজীবন স্থায়ী হবে। এভাবেই শিক্ষা জীবনে পূর্ণতা আনতে পারে। তাই শিক্ষা ও আগ্রহ পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ।
0 Comments
Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box