এক ছোট্ট গ্রামে ছিলো এক রহস্যময় কালো বেড়াল। তার মসৃণ কালো লোম, তীক্ষ্ণ নখ, আর দৃষ্টিতে ছিলো এক অদ্ভুত জ্যোতি। এই বেড়ালটাকে সবাই "অলৌকিক বেড়াল" বলে ডাকত। কারণ তার চোখ দুটো যেন কিছুর ইশারা দিতো, কিছুর আগাম আভাস দিতো।
সন্ধ্যা নামলেই সে গ্রামের মানুষদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতো। কিছু মানুষের বাড়ির সামনে সে একদম চুপচাপ বসে থাকতো আর কিছু সময় পর অন্য কোনো বাড়িতে চলে যেতো। গ্রামের লোকেরা লক্ষ্য করেছিলো, যাদের বাড়ির সামনে বেড়ালটা বেশিক্ষণ বসে থাকে, তাদের জীবনে কিছু ভালো কিংবা খারাপ ঘটনা ঘটে। তাই কেউ কেউ ভয় পেতো, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করতো, এই বেড়ালটা যেন তাদের আগাম বার্তা দিতে আসে।
একদিন গ্রামের ছেলে আরিফ খেয়াল করলো, সেই কালো বেড়ালটা তার বাড়ির সামনে এসে বসেছে। সে প্রথমে ভয় পেয়ে গেলো। কিন্তু তার মনে হলো, হয়তো এই বেড়ালের মধ্যে কিছু একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। তাই সে সাহস করে বেড়ালটার কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "তুমি কি আমায় কিছু বলতে চাও?"
বেড়ালটা তাকে অবাক করে দিয়ে তার দিকে গভীর চোখে তাকালো। আরিফের মনে হলো, সেই চোখের মধ্যে হাজারো গল্প লুকিয়ে আছে। ঠিক তখনই, বেড়ালটা একটা মৃদু শব্দ করে তাকে ইশারা করলো যেন সে তার পেছন পেছন আসে। আরিফ কিছু না ভেবে বেড়ালটার পেছনে হাঁটতে শুরু করলো।
বেড়ালটা তাকে নিয়ে গেলো গ্রামের শেষ প্রান্তে, যেখানে একটা পুরনো পুকুর ছিলো। পুকুরের ধারে গিয়ে সে থামলো, আর তার চোখ দিয়ে এমন এক ঝলকানি ছড়িয়ে পড়লো, যেন চারপাশটা আলোকিত হয়ে উঠলো। আরিফ বুঝতে পারলো, বেড়ালটার চোখে কোনো সাধারণ আলো নয়; এটি এমন এক দৃষ্টি যা মানুষের দুঃখ, কষ্ট আর দুঃখিত ভবিষ্যৎ দেখতে পায়।
আরিফ তখন থেকেই এই বেড়ালটার দেখানো পথে মানুষকে সাহায্য করতে শুরু করলো। সে যখনই বেড়ালটার চোখের আভা দেখতো, বুঝতো, কারো জীবনে কিছু খারাপ ঘটতে চলেছে। তাই, সে সেই ব্যক্তির পাশে গিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করতো। গ্রামের লোকেরা একসময় বুঝতে পারলো, এই কালো বেড়ালটা তাদের বন্ধু, তাদের রক্ষক।
এভাবে বেড়াল আর আরিফ মিলে গ্রামের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সহযোগিতার এক নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো। তাদের জীবনে বেড়ালটির আগমন যেন এক অলৌকিক আশীর্বাদ হয়ে উঠেছিলো, আর আরিফ হয়ে উঠলো গ্রামের মানুষের জন্য এক দয়ালু সেবক। কালো বেড়ালের সেই রহস্যময় চোখের দৃষ্টি আর আরিফের সাহসিকতা গ্রামের মানুষের হৃদয়ে এক সুন্দর গল্প হয়ে বেঁচে থাকলো।