মনোযােগ : শিখন প্রক্রিয়ার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলাে মনােযােগ। বিভিন্ন মনােবিদ নিজস্ব ভঙ্গিতে মনােযােগের সংজ্ঞা দিয়েছেন। রস বলেছেন, এমন একটি প্রক্রিয়া যেটি চিন্তার বিষয়কে স্পষ্টভাবে মনের সম্মুখে এনে দেয়, তাকেই বলে মনােযােগ।
ম্যাকডুগালের মতে, মনের যে সক্রিয়তা জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তা-ই মনােযােগ। উডওয়ার্থ-এর ভাষায় পাশাপাশি অবস্থিত অসংখ্য উদ্দীপকের মধ্য থেকে কোনাে একটিকে বেছে নেওয়ার পদ্ধতিই মনােযােগ। এককথায়, যে কোনাে বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান অর্জনের জন্য মনকে নিবেশিত করার দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়াকে বলা হয় মনােযােগ।
■ শিক্ষায় মনােযােগের ভূমিকা :শিক্ষার সঙ্গে মনােযােগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। শিখন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মনােযােগ আকর্ষণ করা জরুরি। মনােযােগ আকর্ষণের এই কৌশলগুলি নিম্নরূপ:
1) মনােযােগ আকর্ষী কৌশল : জীবনবিকাশের নানা স্তরে মনােযােগের রূপভেদ ঘটে। শৈশবে ব্যক্তিনিরপেক্ষ মনোেযােগের প্রাধান্য থাকে বলে তখন বস্তুর বৈশিষ্ট্য মনােযােগ নির্ধারণ করে। শৈশবে শিশু খেলাধুলার প্রতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মনােযােগী হয়। তাই এইসময়ে শিশুর পাঠক্রম হবে খেলাভিত্তিক। ফলে তার মনোেযােগ বাড়বে পাঠক্রমে।
2) ইচ্ছাসাপেক্ষ কৌশল : শৈশব পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায় ইচ্ছাসাপেক্ষ মনােযােগ। এইসময় শিক্ষার্থীর মনােযােগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে শিখনের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করা, উপদেশ প্রদান, লঘু শাসন ইত্যাদির প্রয়ােগ করতে হয়।
3) পরিসর অতিক্রম না করা : শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষককে খেয়াল রাখতে হবে বিষয়বস্তু যেন তাদের মনোেযােগর পরিসরকে ছাপিয়ে না যায়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সামনে বিষয়বস্তু সহজ ও বােধগম্য করে উপস্থাপন করতে হবে।
4) নির্ধারক প্রয়ােগ : তীব্রতা, স্পষ্টতা, নতুনত্ব ইত্যাদি নির্ধারক প্রয়ােগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রয়ােজনের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
5) বিষয়-বৈচিত্র্য প্রয়ােগ : মনােযােগ সদা চঞল। কোমলমতি শিশুদের কোনাে বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ মনােযােগী করা যায় না। ফলে শিক্ষককে একটি বিষয় ছেড়ে অন্য বিষয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনে মনােযােগী করে তুলতে হবে। সবশেষে, পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে মনােযােগ প্রধান শর্ত বলে শিক্ষার্থীদের মনােযােগ আকর্ষণের বিষয়ে শিক্ষককে সচেতন হতেই হবে।
0 Comments
Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box