1.‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কে বাংলায় তরজমা করেছেন? (মাধ্যমিক, ২০১৯)
উত্তর: স্প্যানিশ ভাষায় লেখা ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির বাংলা তর্জমা করেছেন সাহিত্যিক নবারুণ ভট্টাচার্য।
2. কবি পাবলো নেরুদার পরিচয় কী?
উত্তর: লাতিন আমেরিকার চিলির কবি পাবলো নেরুদা ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সে দেশের নোবেল সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপক কবি।
3.কোন্ ভাষায় সাহিত্যকৃতির জন্য কত খ্রিস্টাব্দে পাবলো নেরুদা নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন?
উত্তর: চিলির প্রধান সাহিত্যভাষা স্প্যানিশ ভাষায় সাহিত্যকৃতির জন্য ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাবলো নেরুদা নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হন।
4.পাবলো নেরুদার নামরহস্যটি কী?
উত্তর : প্রখ্যাত স্প্যানিশ কবি পাবলো নেরুদার আসল নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো। পরে তিনি উনিশ শতকের চেক গল্পকার ইয়ান নেরুদার নামানুসারে নিজের নাম পরিবর্তন করেন। তাঁর পাবলো নামটির সম্ভাব্য উৎস হলেন পল ভারলেইন।
5.মানবসভ্যতায় যুদ্ধ কোন্ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে?
ঊত্তর, মানবসভ্যতা মানুষের দ্বারাই ধীরে ধীরে গড়ে উঠে মানুষের চাওয়া পাওয়াকে চরিতার্থ করে। যুদ্ধ এসে মানবসভ্যতার সেই শৌর্যময় নান্দনিক প্রকাশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
6.‘অসুখী একজন’ কবিতায় অসুখী একজনটি আসলে কে?
উত্তরঃ স্পেনের কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘অসুখী’ হল অপেক্ষারতা মেয়েটির রূপকে সমগ্র স্বদেশ তথা মানবতা। আবার অন্যদিকে প্রিয়তমা নারীর বিচ্ছেদবেদনায় অসুখী কবি তথা কবিতা-কথকও।
7.‘অসুখী একজন’ কবিতায় কথক চলে যাওয়ার আগে ‘তাকে’ কী অবস্থায় ছেড়ে আসেন?
উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক চলে যাওয়ার আগে ‘তাকে’ অর্থাৎ তাঁর প্রিয়তমা নারী তথা নারীকল্প দেশমাতৃকাকে দরজায় প্রতীক্ষারত করে চলে গিয়েছিলেন দূর থেকে দূরে।
8.আমি চলে গেলাম দূর...দূরে।'—কে, কখন চলে গেলেন?
উত্তর : প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় স্বয়ং কথক দেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে চলে গেলেন দূর থেকে দূরে।
9.‘আমি চলে গেলাম দূর...দূরে।'—বক্তা কেন দূরে গেলেন?
উত্তরঃ চিলির গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণের অনিবার্যতায় বক্তা বাসভূমি ছেড়ে দূরে চলে যেতে বাধ্য হলেন।
10.‘সে জানত না...’—‘সে’ কী জানত না?
উত্তরঃ কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায়, কথকের প্রিয়তমা নারীকল্প স্বদেশ জানত না, কথক আর কখনও ফিরে আসবেন না।
11.“সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।”—এরপর কী ঘটেছিল?
উত্তর: ‘সে’ অর্থাৎ বক্তার প্রিয়তমা তথা কল্পিত স্বদেশ বক্তার ফিরে না আসা সম্পর্কে জানত না। এরপর একটা কুকুর হেঁটে চলে যায়, হেঁটে চলে যায় গির্জার এক নান। সপ্তাহ থেকে বছর পার হয়ে যায়।
12.এক সপ্তাহ, এক বছরে কী কী ঘটল ?
উত্তর: কবিতা-কথক তার প্রিয় নারী তথা স্বদেশ ত্যাগ করে চলে গেলে, এক সপ্তাহ-এক বছরে ক্রমে বৃষ্টিতে ধুয়ে গেল তার পায়ের দাগ এবং ঘাস এসে ঢেকে দিল রাস্তা।
13.‘অসুখী একজন’ কবিতায় পায়ের দাগ কীসে ধুয়ে গেল?
উত্তরঃ চিলির কবি পাবলো নেরুদার কবিতা ‘অসুখী একজন’-এ দেখা যায় কথক আপন বাসভূমি ছেড়ে দূরে চলে যাওয়ার পর, তার পায়ের দাগ বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেল।
14. বছরগুলো পার হওয়াকে কেন ‘পাথরের মতো’ বলা হয়েছে?
উত্তর: কবিতা-কথকের ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকা মেয়েটির বিচ্ছেদবেদনা দীর্ঘতর হতে থাকে। পাথরের গুরুভারের ন্যায় সময়ের ভারে তার হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়। তাই বছরগুলো ‘পাথরের মতো’ ভারী মনে হয়।
15.‘নেমে এল তার মাথার ওপর’।—কী, কীসের মতো নেমে এল?
উত্তরঃ চিলির কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কথক তার প্রিয়তমাকে ছেড়ে চলে যান। বিরহবেদনায় ভারাক্রান্ত তার মাথার উপর বছরগুলো একের পর এক পাথরের মতো নেমে এল।
16. তারপর যুদ্ধ এল’—যুদ্ধ কীসের মতো আসে?
উত্তরঃ কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বলা হয়েছে যুদ্ধ আসে রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো।
17.তারপর যুদ্ধ এল’—যুদ্ধ এলে কী ঘটল?
উত্তরঃ চিলির কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ নামক অনুবাদ কবিতায় দেখা যায়, যুদ্ধ এলে শিশু আর বাড়িরা খুন হয়, কিন্তু কবিতা-কথকের ছেড়ে যাওয়া মেয়েটির মৃত্যু হয় না।
18.তারপর যুদ্ধ এল’—কার পর যুদ্ধের আগমন ঘটল?
উত্তরঃ বক্তা অনেক দূরে চলে যাওয়ার পর বৃষ্টি তার পায়ের দাগ ধুয়ে দেয়, রাস্তায় ঘাস জন্মায়। বক্তা যাকে ছেড়ে গেছেন তার মাথার উপর বছরগুলো পাথরের মতো নেমে আসার পর যুদ্ধ আসে।
19.যুদ্ধ এসে কী কী ঘটাল ?
উত্তরঃ যুদ্ধ চিরদিনই ধ্বংসের প্রতিরূপ, যুদ্ধ খুন করল শিশু আর বাড়িগুলিকে। যুদ্ধের নির্মমতায় মানুষের নিরাপদ আশ্রয় ও অস্তিত্বটুকু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।
20.যুদ্ধকে আগ্নেয়পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ যুদ্ধ ধ্বংসাত্মক, সে আগুনের মতো সব পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। ভয়ংকর সব আগ্নেয়াস্ত্র, আগ্নেয়পাহাড়ের লাভা উদ্গিরণের মতো তাদের নির্গত আগুনে সব কিছু নিঃশেষ করে দেয় বলেই এমন তুলনা করা হয়েছে।
21.‘শিশু আর বাড়িরা খুন হলো'—শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল কেন? (মাধ্যমিক, ২০১৭)
উত্তর: রক্তাক্ত আগ্নেয়পাহাড়ের ন্যায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের করালগ্রাসে শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল। অর্থাৎ নিষ্পাপ প্রাণ ও নিরাপদ স্নেহাশ্রয়ের চিহ্নটুকু মুছে দিয়েছিল এই যুদ্ধ।
22.‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।'—কেন মৃত্যু হল না?
উত্তর: কবিকথিত ‘সেই মেয়েটি’ আসলে মাতৃকল্প স্বদেশ। দেশে যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি অবধারিত। দেশীয় সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ তথা মানবতা বেঁচে থাকে।
23.‘সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন'—কেন এমন হল?
উত্তরঃ কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় দেখা যায় যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়তে। যেহেতু সমতলভূমিতেই জনবসতির পরিপূর্ণ বিকাশ, বেশি মানুষের বাস, তাই সেখানেই আগুনের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
24.'ডুবে ছিল ধ্যানে'— দেবতাদের ধ্যানমগ্নতার তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ কবি ‘দেবতা’ বলতে যাদের বুঝিয়েছেন, তারা হল সমাজের উপরতলার সুখী মানুষ। এদের ধ্যানমগ্নতার তাৎপর্য এই যে, এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারে ধ্যানমগ্ন, অন্য ব্যাপারে উদাসীন।
25.“তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।”—কারা স্বপ্ন দেখতে পারল না?
উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় দেখা যায়, হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে থাকা শান্ত হলুদ দেবতারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
26.দেবতারা কেন আর স্বপ্ন দেখতে পারল না?
উত্তর: শান্ত হলুদ দেবতারা, যারা সহস্র বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিল, যুদ্ধের আগ্রাসনে তারা মন্দির থেকে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল বলে আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
27.যুদ্ধে দেবতাদের কোন্ পরিবর্তন ঘটল ?
উত্তর: যুদ্ধে যখন সমতলে আগুন ধরে গেল, তখন সহস্র বছর ধরে ধ্যানে ডুবে থাকা শান্ত হলুদ দেবতারা, মন্দির থেকে উলটে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। তাদের স্বপ্ন দেখার অবকাশ রইল না।
28.মন্দির থেকে দেবতাদের টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যাওয়ার অন্তর্নিহিত অর্থ কী ?
উত্তর: যুদ্ধের ভয়াবহতা দেবতা, দেবালয় এবং দেবতার প্রতি মানুষের অবশিষ্ট আস্থাটুকুকেও বিনষ্ট করে। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে এ কথাই বলা হয়েছে।
29.‘সেই মিষ্টি বাড়ি,’—মিষ্টি বাড়ির পরিবেশে আর কী কী ছিল?
উত্তর: সেই মিষ্টি বাড়ির পরিবেশে ছিল বারান্দা, যেখানে ঝুলন্ত বিছানায় কবিতা-কথক একদা ঘুমোতেন। আর ছিল গোলাপি গাছ, চিমনি, জলতরঙ্গ।
30.‘গোলাপি গাছ’-এর প্রসঙ্গটি কেন এসেছে?
উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথকের বাড়ির কাছে ছিল গোলাপি গাছ। গাছ প্রকৃতির অনাবিল অহিংস সরলতার অনুভব আনে। গোলাপি রং স্নিগ্ধ-ভালোবাসার প্রতীক। তাই কবিতায় গোলাপি গাছের প্রসঙ্গ এসেছে।
31.‘সব চূর্ণ হয়ে গেল,’—চূর্ণ হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: কথকের প্রিয় বাড়ি, তার প্রিয় বারান্দা, যেখানে একদা ঝুলন্ত বিছানায় তিনি ঘুমিয়েছিলেন, গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ, এসবের চূর্ণ হওয়ার কারণ যুদ্ধ ও তার ধ্বংসযজ্ঞ।
32.‘সব চূর্ণ হয়ে গেল,’—কী কী চূর্ণ হয়ে গেল?
উত্তর: চূর্ণ হয়ে গেল কথকের বাড়ি, তার বারান্দা, একদা ঝুলন্ত বিছানায় যেখানে তিনি ঘুমিয়েছিলেন। এ ছাড়া সেই গোলাপি গাছ যার ছিল ছড়ানো করতলের মতো পাতা, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গও চূর্ণ হয়ে গেল।
33.‘যেখানে ছিল শহর’— যেখানে শহর ছিল, সেখানে যুদ্ধের পর কী আছে?
উত্তর: যেখানে ছিল শহর, যুদ্ধের পর সেখানে ছড়িয়ে থাকল কাঠকয়লা, দোমড়ানো কিছু লোহা। আর পাথরের মূর্তিগুলির বীভৎস মাথা এবং রক্তের একটা কালো দাগ।
34. মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন, সমাজে যারা সুউচ্চ উজ্জ্বল মূর্তির মতো স্থাপিত ছিল, তাদের পতন ঘটেছে যুদ্ধে।
35.“রক্তের একটা কালো দাগ।”—বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ রক্তের দাগ শুকিয়ে গেলে কালো হয়ে যায়। যুদ্ধ ক্রমান্বয়ে হত্যা করে, রক্ত ঝরায়। রক্তের কালো দাগ সেই হনন দুঃখময় স্মৃতিচিহ্ন।
36.কে, কার জন্য অপেক্ষা করেছিল?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক ‘মেয়েটি অর্থাৎ মাতৃকল্প দেশ, কবির তথা কথকের দেশে ফেরার প্রত্যাশায় অপেক্ষা করেছিল।
37.‘...সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।'—এমন অপেক্ষার কারণ কী?
উত্তরঃ প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা চিরকালীন। তাই কবিতা-কথকের প্রিয় নারীকে অপেক্ষায় রেখে তিনি চলে গিয়েছিলেন বলে তার অপেক্ষা শেষ হয় না।