ক্লাস ১০-এর ইতিহাস থেকে ৮ নম্বরের প্রশ্ন সাধারণত বিশদে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণমূলক হয়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন ও তাদের উত্তর দেওয়া হলো:

ক্লাস ১০-এর ইতিহাস থেকে ৮ নম্বরের প্রশ্ন সাধারণত বিশদে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণমূলক হয়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন ও তাদের উত্তর দেওয়া হলো:

প্রশ্ন ১: সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশবাদের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:

সাম্রাজ্যবাদ হলো সেই নীতি, যার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী দেশ তার প্রভাব এবং শাসন বিস্তৃত করার চেষ্টা করে দুর্বল দেশগুলির উপর। সাম্রাজ্যবাদীদের লক্ষ্য থাকে সেইসব দেশগুলিকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। এদিকে, উপনিবেশবাদ হলো সাম্রাজ্যবাদের একটি কার্যকরী রূপ, যেখানে একটি শক্তিশালী দেশ সরাসরি কোনো দুর্বল দেশ বা অঞ্চলে শাসন কায়েম করে এবং সেখানে নিজেদের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে।
উপনিবেশবাদের ফলে একটি দেশের সম্পদ, শ্রম এবং বাজার ব্যবহৃত হয় শক্তিশালী দেশের কল্যাণে। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি তাদের সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে উপনিবেশগুলি স্থাপন করে এবং সেই অঞ্চলের মানুষদের উপর তাদের শাসন চাপিয়ে দেয়। এই নীতিগুলি বিশেষত ১৯ শতকে ইউরোপীয় দেশগুলির দ্বারা প্রচলিত ছিল, যার ফলে আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপন করা হয়।
 প্রশ্ন ২: ভারতে ১৯৩০ সালের লবণ সত্যাগ্রহের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।

 উত্তর:

লবণ সত্যাগ্রহ ১৯৩০ সালের ১২ই মার্চ থেকে ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক আয়োজিত একটি অসহযোগ আন্দোলন ছিল, যা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী প্রতিবাদ। গান্ধীজি ও তার অনুসারীরা লবণের উপর ব্রিটিশ সরকারের আরোপিত করের বিরোধিতা করে আহমেদনগর থেকে দান্ডি পর্যন্ত প্রায় ২৪০ মাইল হাঁটেন এবং সেখানে লবণ তৈরি করেন। 
এই আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়, কারণ এটি সাধারণ মানুষদের মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি প্রচুর সহানুভূতি এবং সমর্থন জাগিয়ে তোলে। 

     ∆∆∆ লবণ সত্যাগ্রহের প্রধান প্রভাবসমূহ ∆∆∆
1. **সামাজিক ঐক্য বৃদ্ধি:** এই আন্দোলন হিন্দু-মুসলিম ঐক্য এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে একতায় সাহায্য করেছিল।
2. **আন্দোলনের বিস্তার:** ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে লবণ সত্যাগ্রহকে অনুসরণ করে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
3. **আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:** আন্তর্জাতিক স্তরে এই আন্দোলনের কারণে ব্রিটিশ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা শুরু হয়।
4. **ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি:** ব্রিটিশ সরকার অনেক কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার করে এবং আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে, কিন্তু এতে আন্দোলন আরও জোরালো হয়।

প্রশ্ন ৩: মহাযুদ্ধের পর বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল?

উত্তর:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) পর বিশ্ব রাজনীতির ক্ষমতার ভারসাম্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল। যুদ্ধের শেষদিকে এবং যুদ্ধের পরে প্রধান দুই শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উঠে আসে, যারা যুদ্ধ শেষে বিশ্ব রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। 
                   ∆∆∆ মহাযুদ্ধের প্রভাব ∆∆∆
1. **দ্বিধ্রুবিশ্ব:** মহাযুদ্ধের পর বিশ্ব দুটি প্রধান শিবিরে বিভক্ত হয়—পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলির নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র এবং পূর্ব ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন। 
2. **শীতল যুদ্ধ:** যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মতাদর্শগত সংঘর্ষ শীতল যুদ্ধের সূচনা করে, যা ১৯৪৫ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
3. **উপনিবেশবাদের পতন:** মহাযুদ্ধের পর বহু এশিয়ান ও আফ্রিকান দেশ ব্রিটিশ, ফরাসি, ও অন্যান্য ইউরোপীয় উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। 
4. **জাতিসংঘের গঠন:** বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনীতি ও মানবাধিকার রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন ৪: জার্মানির একীকরণের পেছনে অটো ভন বিসমার্কের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:

অটো ভন বিসমার্ক ছিলেন প্রুশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং জার্মানির একীকরণের প্রধান স্থপতি। তার কার্যকর কূটনৈতিক এবং সামরিক কৌশলের মাধ্যমে তিনি ১৮৭১ সালে জার্মানির একীকরণ সম্পন্ন করেন। 
 ∆∆∆বিসমার্কের প্রধান কাজগুলির মধ্যে ছিল:∆∆∆

1. **আয়রন অ্যান্ড ব্লাড নীতি:** বিসমার্ক বিশ্বাস করতেন যে জার্মান একীকরণ শুধুমাত্র কূটনৈতিক আলোচনা দিয়ে সম্ভব নয়, বরং তা সম্ভব হবে যুদ্ধ এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মাধ্যমে।
2. **ডেনিশ যুদ্ধ (১৮৬৪):** ডেনমার্কের বিরুদ্ধে প্রুশিয়া ও অস্ট্রিয়ার একত্রিত প্রচেষ্টা জার্মানদের শ্লেসভিগ ও হোলস্টিন অঞ্চল দখল করতে সাহায্য করে।
3. **অস্ট্রো-প্রুশিয়ান যুদ্ধ (১৮৬৬):** অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করার মাধ্যমে বিসমার্ক জার্মান কনফেডারেশন ভেঙে নতুন উত্তর জার্মান কনফেডারেশন তৈরি করেন, যা প্রুশিয়ার নেতৃত্বে আসে।
4. **ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধ (১৮৭০-১৮৭১):** ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছিল জার্মান একীকরণের শেষ ধাপ। ফ্রান্সকে পরাজিত করে বিসমার্ক সমগ্র জার্মান জাতিকে একত্রিত করেন এবং ১৮৭১ সালে কাইজার উইলহেম প্রথমকে সম্রাট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
এভাবে অটো ভন বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানি একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে উঠে আসে এবং ইউরোপের একটি প্রধান শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।


এই প্রশ্নগুলো ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলি নিয়ে গঠিত এবং পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য এগুলোকে ভালোভাবে প্রস্তুত করা উচিত।

Post a Comment

0 Comments