উত্তর: শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণের কাজ কোনো তাত্ত্বিক ব্যাপার নয়। শিক্ষাকে বাস্তবসম্মত করে তোলার জন্য শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আধুনিককালে শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ দিকের বিকাশসাধনের কথা বলা হয়। তাই শিক্ষার পুরোনো উদ্দেশ্যগুলিকে আজ অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। ৪৬তম আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে শিক্ষার আধুনিক কয়েকটি উদ্দেশ্য স্থির করা হয়েছে। নীচে উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করা হল—
● দৈহিক বিকাশ : শিক্ষার সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষার্থীর দেহের ওপর। সুস্থ শরীর ও মন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সুস্থ শরীর ও মনের সঙ্গে শিক্ষার একটি ইতিবাচক সম্পর্ক আছে। তাই শিক্ষার মধ্য দিয়ে যাতে শিক্ষার্থীদের দৈহিক বিকাশ ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
● মানসিক বিকাশ : খাদ্য যেমন দেহের পুষ্টি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তেমনি জ্ঞান মানুষের মনের বিকাশে সাহায্য করে। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভুল ও সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া।
● সামাজিক বিকাশ : প্রতিটি মানুষ সামাজিক পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে এবং সমাজ থেকে শিক্ষা লাভ করে বড়ো হয়ে ওঠে ও আগামী দিনে সমাজের উৎকর্ষসাধনের কাজে ব্রতী হয়। তাই শিশুকে সমাজের একজন সুনাগরিক করে গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাকে নিতে হবে।
● চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষা : আধুনিক শিক্ষা শিশুকেন্দ্রিক। এখানে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্য আলাদা। প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত চাহিদা থাকে। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সহপাঠ্যক্রমিক কাজের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা হয়।
● সংগতিবিধানের শিক্ষা : মানুষকে মূলত তিন ধরনের পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধান করতে হয়। প্রাকৃতিক, সামাজিক ও মানসিক পরিবেশ। শিক্ষাবিদ Horney বলেছেন, শিক্ষাই ব্যক্তিকে অভিযোজন ক্ষমতা দিয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যক্তি পরিবেশের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সংগতিবিধান করে চলে।
● অর্থনৈতিক বিকাশ : অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল ব্যক্তি মানসিক দিক থেকে খানিকটা দুর্বল হয়, নানাবিধ সমস্যায় পড়ে। ফলে শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে অর্থনৈতিক দিক থেকে ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করা, যাতে সে ভালোভাবে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংগ্রহ করতে পারে।
● জ্ঞান অর্জন : কমেনিয়াস বলেছেন যে, ‘Knowledge dispels mists of ignorance'; অর্থাৎ, জ্ঞান অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে। এই জ্ঞান হল বিশ্বসংসারের বিভিন্ন বিষয়কে জানার জ্ঞান। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার্থীকে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা।
● কাজ করার দক্ষতা অর্জন : বর্তমানে শিক্ষা কেবল একটি প্রক্রিয়া নয়, শিক্ষা একটি উৎপাদন। তাই শুধু জানলেই চলবে না, জানার পর তাকে বাস্তবে প্রয়োগ করার দক্ষতা থাকতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি উৎপাদনশীল নাগরিকে পরিণত হবে।
• একত্রে বসবাসের শিক্ষা : একা মানুষ বাঁচতে পারে না। একসঙ্গে মিলেমিশে বাঁচাই হচ্ছে মানবজীবনের উদ্দেশ্য। যে শিক্ষা ব্যক্তিকে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে বাঁচতে শেখাবে সেটাই হবে আসল শিক্ষা।
© প্রকৃত মানুষ তৈরি করা ঃ শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যক্তিকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করা। এই মানুষ হওয়ার অর্থ ব্যক্তিকে কিছু গুণ ও দক্ষতা অর্জন করা, যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায় শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ। যার মাধ্যমে ব্যক্তিকল্যাণ ও সমাজকল্যাণ দুই-ই সাধিত হবে এবং দেশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাবে।